বাশার নূরু: [২] ঢেলে সাজছে ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়া যে ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, সেই গ্রিডের প্রযুক্তি এবং কাঠামোগত পরিবর্তন করতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ, সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ডেটা চীন ধ্বংশ করতে পারে এমন আশঙ্কা করছে ভারত।
[৩] চীনের নবতম টার্গেট হতে চলেছে ভারতের বিদ্যুৎ বিপর্যয়। গোটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গ্রিডে ট্রিপ করানোর চক্রান্ত চলছে কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে। সাইবার ও ভাইরাস আক্রমণের এই জোড়া চক্রান্ত থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে বাঁচাতে দীর্ঘস্থায়ী ও আধুনিক একটি সুরক্ষা কবচ তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র। বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিং বলেছেন, বিদ্যুৎ বণ্টন প্রক্রিয়ার সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন। সেই কারণেই এতদিন ধরে যে উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, ধীরে ধীরে সেই পদ্ধতি বদলে দেওয়া হবে। ব্যবহার করা হবে সম্পূর্ণ নতুন উপকরণ, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি। ভারত বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় একটি ফায়ারওয়াল নির্মাণ করবে বলে ঠিক করেছে।
[৪] চীনের হ্যাকার গোষ্ঠীর এই সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। এই কারণেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে চীনের যত উপকরণ ও যন্ত্রাংশ এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এবং যেগুলি এখনও আমদানি হয়ে চলেছে, সেই তাবৎ উপকরণের পরীক্ষা হবে। খতিয়ে দেখা হবে বিভিন্ন গ্রিডের টেকনিক্যাল সিস্টেম। প্রতিটি রাজ্যকেই এই সতর্কতবার্তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে কথাও বলবে বিশেষজ্ঞরা। এজন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করছে কেন্দ্র। ওই টাস্ক ফোর্সের আওতায় চারটি গ্রিডেই প্রযুক্তিগত তদন্ত হবে। ইতিমধ্যেই চীনের সাপ্লাই করা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত উপকরণ ও পণ্যের উপর আমদানি কর বাড়িয়েছে কেন্দ্র। লক্ষ্য, দেশীয় উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া। আগামী ১ আগস্ট থেকে ওই চীনা পণ্য ও উপকরণের উপর কার্যকর হবে কর। সোলার সেল ও মডিউলের আমদানি কর বাড়ছে অনেকটাই। যা চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাই লাদাখের সামরিক সংঘাতের পাশাপাশি এবার সাইবার ও ভাইরাস আক্রমণের কৌশল নিচ্ছে বেজিং।
[৫] হ্যাকারদের মাধ্যমে সাইবার হানা দিয়ে যেমন সরকার ও কর্পোরেটের তথ্যপ্রযুক্তির ডেটাবেসকে বিকল করে দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছে চীন, তেমনই ভাইরাসের মাধ্যমে গ্রিড ট্রিপ করিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও রয়েছে। মন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুৎ অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সমস্ত শিল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ডেটাবেস সবই বিদ্যুতের মাধ্যমে চালিত হয়। সামরিক কেন্দ্র থেকে পরমাণু গবেষণা, সবই বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। তাই বিদ্যুতের গ্রিডের বিপর্যয় ঘটলে সেটার প্রভাব হবে সর্বাত্মক। বিশেষ করে যদি প্রতিটি গ্রিডেই বিপর্যয় নেমে আসে, তাহলে দেশজুড়ে অন্ধকার নেমে আসবে। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের কাছে যে সংবাদ আসছে, ম্যালওয়্যার বা ট্রোজান হর্স ভাইরাস ইনস্টল করা হতে পারে যন্ত্রাংশ বা উপকরণের মধ্যেই। আর সেগুলি দূর নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তিতে অ্যাক্টিভেট করে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আক্রমণের করা হবে। সুতরাং প্রাথমিকভাবে দেশীয় পণ্যই ব্যবহারের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। আর আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করা না হলেও সেগুলি সার্বিক পরীক্ষা করা হবে।
[৬] ইতিমধ্যেই সাইবার আক্রমণের সতর্কতা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ওই কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন, যদি একসঙ্গে গোটা দেশে অন্ধকার নেমে আসে, তাহলে খুব বেশি হলে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের স্টোরেজ থাকবে। কিন্তু গোটা দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড পুনরায় মেরামতি করে চালু করতে কতদিন লাগবে, তা বলা সম্ভব নয়। সুতরাং সেরকম কোনও পরিস্থিতি যাতে না আসে সেই লক্ষ্যই এখন নেওয়া হয়েছে। সূত্র: বর্তমান