ডেস্ক রিপোর্ট : শনিবার সিটিও ফোরাম (প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের সংগঠন) আয়োজিত ‘সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ডেটা ব্রিচ ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ওয়েবিনারে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, মহামারির সময় হ্যাকাররা বসে নেই বরং তারা আরো বেশি সক্রিয়। কারণ এখন প্রায় সবাই জেনে না জেনে টেকনোলজিগুলো ব্যবহার করছে। সম্প্রতি ইন্টারপোল থেকেও বিশ্বব্যাপী সাইবার অ্যাটাকের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে সাইবার হামলার রেড জোনে।
সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকারের সংঞ্চালনায় জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক পার্থপ্রতিম দেব।
আলোচক হিসেবে অংশ নেন সিটিও ফোরামের অ্যাডভাইজার ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের হেড প্রফেসর ড. সৈয়দ আখতার হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার মেহেদি হাসান, গ্রামীণফোনের ইনফরমেশন সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট শাহাদাত হোসেন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিটিও ফোরামের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির আইটি ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর আজিম উ. হক।
সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, ‘করোনা মহামারির এ সময়ে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আইটি টিমকে আবশ্যিকভাবে বাসায় থেকে কাজের সুযোগ দিতে হয়েছে, রিমোট সেটআপ দিতে হয়েছে, সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিকে মাথায় রেখে ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা বাড়াতে হয়েছে। আইটি টিম মেম্বাররা নিজেদের বাসায় হোম এনভায়রনমেন্টে কাজ করছে। সেখানে নানা ধরনের সফটওয়্যারের ক্র্যাক বা পাইরেটেড ভার্সন সেটআপ করা থাকে যা সাধারণত অফিস এনভায়রনমেন্টের কম্পিউটারে থাকে না, এতে করে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ভিপিএন বা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাসা থেকে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের মূল ডাটাবেজে ঢোকা হচ্ছে, কিন্তু সে চ্যানেল সিকিউর করতে কতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় প্রতিটা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং নিয়ে আসছে এবং এই টেকনোলজিগুলোই সবচেয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো এর সিকিউরিটির দিকে নজর দিচ্ছে না বলেই চলে। ব্যাংকগুলো হ্যাকারদের সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা। কারণ এখান থেকে সরাসরি লাভবান হওয়া সম্ভব। আমাদের কানে আসছে এরই মধ্যে অনেকগুলো সাইবার আক্রমণ হয়েছে কিন্তু প্যানিক সৃষ্টি হবে এই দোহাই দিয়ে নিউজ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে এবং আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এই সাইবার ঝুঁকিই তাদের গ্রাহকদের জন্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
তপন কান্তি সরকার আরো বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান বাদে বেশিরভাগই বিশেষ করে ব্যাংকগুলো তাদের আইটি বা টেকনোলজির প্রতি ইনভেস্টমেন্টে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তবে টেকনোলজির ব্যবহারই করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে শক্তি যুগিয়েছে। ব্যাংকগুলো বরাবরই সাইবার হামলার ঝুঁকির শীর্ষে অবস্থান করে। অথচ খুব কম সংখ্যক ব্যাংকিং নেতৃত্বই এই সমস্যাকে জটিল সমস্যা হিসেবে দেখে থাকেন।’
ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর উচিত ডিজিটালাইজেশন অব্যাহত রাখা, যাতে করে এই মহামারির সময় অত্যাবশ্যকীয় কারণ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে উপস্থিত হয়ে সেবা নিতে না হয়। এর পাশাপাশি সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিকে সর্বোচ্চ ঝুঁকি মনে করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতন করা উচিত।’
সুত্র : রাইজিংবিডি ডট কম