বিপ্লব বিশ্বাস : [২] বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়ায় ভারতের সাবেক ক্রিকেট স্টার এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীর আদি বাড়ি। এখনও আছে তার পূর্বপুরুষদের গাঙ্গুলী বাড়ি। প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির সম্ভার ছিল ময়মনসিংহ। যার অনেকটারই অংশীদার ফুলবাড়ীয়া উপজেলা।
[৩] পর্যটনের জন্য এক অপার সম্ভাবনাময় ফুলবাড়ীয়ার চারিদিকে সবুজের সমারোহ। শাল-গজারী, রাবার ও অন্যান্য বৃরাজিসহ বন্যপ্রাণী, অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্তোষপুর। মনোমুগ্ধকর আনই নদী ও বড়বিলাসহ দেশের বৃহৎ অর্কিড বাগান ও আলাদিন পার্ক। এক নজর দেখার জন্য সুযোগ পেলেই চলে আসতে পারেন পর্যটন সম্ভাবনাময় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায়।
[৪] ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা।
[৫] ১৮৬৭ সালে স্থাপিত হয় ফুলবাড়ীয়া থানা (বর্তমান উপজেলা)। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাহাড়ঘেরা আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেরোলে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম পাহাড়ীঅঞ্চল সন্তোষপুর। গ্রামটি ঘিরে রয়েছে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিপুন শিল্পীর হাতে তৈরি রাবার বাগান, সবুজের সমারোহ শাল-গজারী এবং বিভিন্ন প্রজাতির-গাছ গাছরাসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারন্য সন্তোষপুর বনবিট।
[৬] প্রকৃতির সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ যে কাউকেই করে তুলবে মুহূর্তের মধ্যেই ব্যাকুল। উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বিখ্যাত বড়বিলার 'নবাইকুরির' কিংবদন্তী ক'জনাই বা জানে। বড়বিলাতে অনেক কুরিই রয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় ৩শ বর্গফুট এলাকা জুড়ে রহস্যঘেরা নবাইকুরি। অদ্যবধি কেউ এর গভীরতা নির্নয় করতে পারেনি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে নবাইকুরির তলদেশে সর্বদাই ঝর্ণা প্রবাহিত। শাশ্বত বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক কিংবদন্তীর এক নীরব সাক্ষী বড়বিলার নবাইকুরি। শুধু তাই নয়, দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিল হিসাবে পরিচিত এই বড়বিলা।
[৭] অপরিদেক রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত আনই রাজার ভিটা। বহু বছর আগের কথা। যার নাম ছিল আনই রাজা। জাঁকজমকপূর্ন ছিল এক রাজপ্রাসাদ। নিরাপত্তার জন্য প্রাসাদের চার পাশে বিশাল খাল খনন করা হয়েছিল। একদিন হঠাৎ ঝড় বৃষ্টির রাতে আনাই রাজার মায়ের রূপ ধারন করে এক অলৌকিক শক্তি ‘তোফান’ লোহার প্রাসাদ উড়িয়ে সেই খালে তলিয়ে দেয়। যা আজকের আনই নদী। আনই রাজার ভিটা খনন করলে এখনও পাওয়া যেতে পারে প্রত্মতান্ত্বিক অনেক সম্পদ। উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী শুক পাটুলী গ্রামের দরগা পুকুরের জলের লীলা। পুকুরের পাহাড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল বড় বড় পূরণো বৃক্ষরাজি ।
[৮] বৃক্ষ গুলোতে থাকে কয়েক হাজার টিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখিগুলোর কলকাকলিতে পুকুরের আশপাশে সবসময় মুখরিত থাকে। দরগায় রান্না করা খাবার মানত করলে ঐ পুকুরের জল ছাড়া কোনও খাবার এখনও সিদ্ধ হয়না।
[৯] ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভরাডোবা সাগরদীঘী পাকা সড়কের পাশে। লাল মাটির পাহাড়ী নির্জন নিভৃত এলাকা এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা গ্রামের ১৬ একর জায়গায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্কিড ফুলের বাগান। যার কোন সুগন্ধ নেই, আছে শুধু সৌন্দর্য আর রঙের বাহার।
[১০] উপজেলার দক্ষিনাঞ্চল সীমান্তবর্তী সবুজেঘেরা লাল মাটির আবরণে বেষ্টিত আঁকাবাঁকা পথ এনায়েতপুর ইউনিয়নের বেতবাড়ি অজপাড়া গ্রামে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক আলাদ্দিন'স পার্ক। ইচ্ছা থাকলে এগুলোর পাশাপাশি দেখে যেতে পারেন, উপজেলার চক দেওগাঁও ভারতের ক্রিকেট স্টার সৌরভ গাঙ্গুলীর বংশধরের গাঙ্গুলী বাড়ী, জোরবাড়ীয়া গ্রামের ১২০০ হিজরীতে নির্মিত মসজিদ, রায় বাড়ীর পাশে শিবঘাট মন্দির, আছিম বাজারে হযরত পিরপাল মিছকিন শাহ্ (রাঃ) মাজার, বড়খিলা গ্রামে বিবিরঘর, জোরবাড়ীয়া গ্রামে মুক্তাগাছা জমিদারে ডি-কাচারি ও হাতি বাঁধার ঘর, ফুলবাড়ীয়ার সন্নিকটে ঘাটাইল উপজেলার গুপ্তবৃন্দাবন, যেখানে রাধা-কৃষ্ণের মিলন হতো।
[১১] এই ভ্রমণের জন্য সহযোগিতা করেছেন দৈনিক ভোরের কাগজের ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি হাফিজুল ইসলাম স্বপন, দৈনিক জনতা ও টাইমস ২৪ ডটনেটের ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি মো. আঃ জব্বার ও স্থানীয় ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম। সৌরভ গাঙ্গুলীর নিকট আত্মীয় স্বর্গীয় প্রফুল্ল চরণ গাঙ্গুলীর ছেলে প্রদোষ কুমার গাঙ্গুলী ও তার ছেলে প্রদ্যুৎ কুমার গাঙ্গুলী বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :