আব্দুল্লাহ আল আমিন: পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের সাথে জড়িত রয়েছে তারাবির নামাজ আদায়। যুগ যুগ আর বছরের পর বছরে ধরে কোরানে হাফেজগণ দেশের বিভিন্ন মসজিদে খতমে তারাবির মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লীগণের নামাজ আদায়ে ইমামতি করে আসছে। মুসল্লীরাও তাদের পিছনে মনের আমেজে খতমে তারাবি আদায় করে আসছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার পাদুর্ভাবে করোনা সংক্রমনের আশংকায় সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও মসজিদে নামাজ আদায়ে মুসল্লীদের উপস্থিতি সংক্ষিপ্ত করা হয়। মসজিদে নামাজ আদায়ে মুসল্লীদের উপস্থিতি সরকারিভাবে বাধ্যবাধকতা থাকায় খতমে তারাবি আদায় হয়নি বললেই চলে। এতে দেশের হাজারো কোরানে হাফেজ তারাবি পড়ানো বঞ্চিত হন এবং এই সময়ে বেকার হয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে যান তারা। অনেকেই আর্থিকভাবে টানাপোড়ানে পড়ে যান। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। এদের বেশিরভাগ কোরানে হাফেজগণ মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু নিতে না পেরে একেবারে কঠিন অবস্থায় সময় পার করছেন। ময়মনসিংহ জেলাও এর বাইরে নয়।
খতমে তারাবি পড়ানো থেকে বঞ্চিত ও বেকার হয়ে পড়া ময়মনসিংহের কোরানে হাফেজদের করুন পরিস্থিতির বিষয়টি চোখে পড়ে ময়মনসিংহের মানবিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের। করোনা মহামারির মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এই সব অসহায় এবং আর্থিকভাবে অনটনে পড়া কোরানে হাফেজ এবং সংসারে থাকা অণ্যান্যদের মুখে হাসি ফুটাতে মানিবক পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান এগিয়ে আসেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরে ধর্মপ্রাণ এ সব কোরানে হাফেজ ও তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে পরিকল্পনা নেন। ময়মনসিংহে তারাবি পড়ানো বঞ্চিত হওয়ায় বেকার হয়ে পড়া এই সব কোরানে হাফেজদের খোজ খবর নেন। ডিবি পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের তালিকা তৈরী করেন। এক শত ৬০ জন কোরানে হাফেজদের তালিকা করে তাদের মাঝে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ উপহার হিসাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
একই সাথে সমাজের তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজরা সম্প্রদায়ও বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারে অসহায় হয়ে পড়ে। তালিকা করা হয় হিজরা সমপ্রদায়ের এক শত ২৬ জনের।
শনিবার সকালে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ২৩ মে, শনিবার সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এই সব কোরানে হাফেজ ও হিজরাদের খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়।
সরকারি বেসরকারি সহযোগীতার পাশাপাাশি পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের নির্দেশে সমাজের নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবি কর্মহীন, বেকার হয়ে পড়া, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের খুজে পর্যায়ক্রমে সহায়তা করে আসছে জেলা পুলিশ। বস্তিবাসী, অসহায়, অস্বচ্ছল, দিন এনে দিন খাওয়া, কর্মহীন, শ্রমিক, বেদে পরিবার, নাপিত, নৌকা মাঝি, এতিমখানার এতিম, পঙ্গু, স্বামীহারা অসহায়দের খুঁজে খুঁজে তালিকা করে তাদের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়ে মানবিক পুলিশ সুপার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়াও লকডাউনে বিভাগীয় নগরীতে না খেয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকা ভাসমানদের রান্না করা খাবারের প্যাকেট তুলে দিয়েছেন। পুলিশ সুপারের পে ডিবির ওসি শাহ কামাল নির্দেশ পেয়ে তাৎনিক অসহায়দের ঘরে খাবার পৌছে দিয়ে আসছে।
শনিবার ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ আরো বলেন, শুধু করোনাকালীন সময়ে নয়, পুলিশ সব সময় অসহায়দের সহায়তা করে আসছে। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, ঈদকে সামনে রেখে তারাবি পড়ানো বঞ্চিত কোরানে হাফেজ, হিজরা, এতিমদের সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে কারো কাছে পরিচয় দিয়ে খাদ্য সহায়তা নিতে না পারা অসহায়দের পুলিশ গোপনে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছে।