ডেস্ক রিপোর্ট : মনোমুগ্ধকর অভিনয় কিংবা মডেলিংয়ের গুণে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রতিটি বাসার ড্রইংরুমে। তাদের নিয়ে আড্ডা জমত পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে। টেলিভিশন খুললেই তাদের দেখা যেত নিয়মিত। বলা হচ্ছে সেই সব অভিনয়শিল্পী-মডেলের কথা, যারা ছিলেন টিভি নাটক-অনুষ্ঠান-বিজ্ঞাপনের সোনালি যুগের চালক। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কাজ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে। অনেকে আবার কাজ করছেন পর্দার আড়ালে কিংবা অন্য ভুবনে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের মনে রেখেছে। আমাদের আজকের আয়োজন তাদের মধ্য থেকে চার তারকাকে নিয়ে।
মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী
পুরো নাম মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী। তবে তিনি সবার কাছে চাঁদনী নামেই পরিচিত। চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু। পরে চলচ্চিত্র, নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র-তিন মাধ্যমেই দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন চাঁদনী। তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি আসে চলচ্চিত্র থেকে। ‘লালসালু’ ছবিতে জমিলা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। অথচ সেই চাঁদনীকে এখন আর কোনো মাধ্যমেই দেখা যায় না। ২০০৮ সালে সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর সংসারে মনোযোগ দেন তিনি। মিডিয়া থেকে পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। মাঝে মাঝে তাকে নৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যেত, সেটাও কোনো উৎসব-পার্বণের অনুষ্ঠানসূচিতে। ২০১৮ সালে বাপ্পার সঙ্গে তার সংসার ভেঙে যায়। সম্প্রতি চাঁদনী একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তার মায়ের লেখা একটি মৌলিক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন, যা শিগগিরই প্রকাশ পাবে।
তানভীন সুইটি
১৯৯৫ সালে সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে পথচলা শুরু হয় তানভীন সুইটির। এর পর টিভি নাটকে তার অভিষেক হয় প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নাটকের মাধ্যমে। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একাধারে কাজ করে গেছেন মঞ্চ, টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনে। সুইটি আবু সাইয়িদের ‘বাঁশি’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন। এটিই তার ক্যারিয়ারের একমাত্র ছবি। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে দারুণ সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা। ছোট পর্দা কাঁপানো সেই সুইটিকে এখন আর টিভি পর্দায় দেখা যায় না। সংসার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যস্ত তিনি। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কর্মকা- ও অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্যক্রমে তার দেখা মেলে। সময় বের করতে পারলে অভিনয় করেন পছন্দের জায়গা মঞ্চেও।
রিচি সোলায়মান
ছোটপর্দার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান। তিনি ছিলেন একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা ও প্রযোজক। তাকে দেখা গেছে বড় পর্দায়ও। রিচি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে আর বড় হয়ে টনি ডায়েসের বিপরীতে ১৯৯৮ সালে ‘বেলা অবেলা’ ধারাবাহিক নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নীরব প্রেম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। ২০০২ সালে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের সমালোচক বিভাগে সেরা টিভি অভিনেত্রী বিভাগে তারানা হালিম ও আফসানা মিমির মতো প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীদের পেছনে ফেলে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন সেই সময়ের এই উঠতি অভিনেত্রী। তিনি এই পুরস্কার পান ফেরদৌস হাসান পরিচালিত ‘ত্যাগ’ নাটকের কুসুম চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে। বর্তমানে রিচিকে টিভি পর্দায় আর নিয়মিত দেখা যায় না। স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাদের ঘিরেই সব ব্যস্ততা রিচির। সময় পেলে এখনো মাঝে মাঝে ছুটে আসেন বাংলাদেশে এবং কাজ করেন ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতে।
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি
একসময়ের বহুল আলোচিত মডেল-অভিনেত্রী শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি। বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পেয়েছিলেন সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা। ২০০৪ সালে ‘মিস বাংলাদেশ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এর পর অংসখ্য জনপ্রিয় কাজ করে গেছেন। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বহু নাটকের মাধ্যমে পর্দায় সরব থাকতে দেখা গেছে তাকে। তিন্নি কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও। যেখানে তার বিপরীতে জুটি বেঁধেছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খান। সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি তিন্নি। অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন বিশৃঙ্খলার সঙ্গে। বিয়ে, বিচ্ছেদ, মাদকাসক্ত-সব মিলেয়ে তার জীবন হয়ে গিয়েছিল পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মাঝে নাটকে দেখা গেলেও নিয়মিত হননি আর। সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করছেন তিন্নি। বর্তমানে একমাত্র মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে কানাডার মন্ট্রিলে রয়েছেন। সেখানেই কাটছে একসময়ের ভীষণ ব্যস্ত এই অভিনেত্রীর জীবন।