এস এম নূর মোহাম্মদ : [২] করোনার ঝুঁকি এড়াতে লঘু অপরাধে দণ্ডিত আসামিদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২ হাজার ৮৮৪ জনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। এরইমধ্যে অনেককে মুক্তিও দেয়া হয়েছে। দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দী রয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার। অথচ ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২৫ হাজার। গত ৫ মে পর্যন্ত বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
[৩] এদিকে অাদালত বন্ধ থাকায় অনেকে জামিন যোগ্য ও হয়রানি মূলক মামলায়ও আটক আছেন। তাই করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিত করতে অধিক সংখ্যক বন্দীদের মুক্তি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
[৪] সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে এবং যাদের স্বল্প মেয়াদে সাজা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের ৬০ বছরের ওপরে বয়স তাদের আটকে রাখা ঠিক হবেনা। তিনি বলেন, ৫ বছরের মধ্যে ৩ বছর, ১০ বছরের মধ্যে ৭ বছর, যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৫-২০ সাজা খাটা হয়েছে এমন আসামিদের সরকার মুক্তি দিতে পারে। এমনিতেও তো সরকার সাধারণ ক্ষমায় অনেককে মুক্তি দেয়। কারাগারে সামাজিক দুরুত্ব মানা হচ্ছেনা। বেশি সংখ্যক মুক্তি না দিলে কঠিন অবস্থা হয়ে যেতে পারে।
[৫] জ্যেষ্ঠ অাইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, যারা ৮০ ভাগ সাজা খেটেছে এবং যাদের ৭০ এর ওপরে বয়স তাদের মুক্তি দেয়া যেতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতিসহ গুরুতর অভিযোগে মামলা রয়েছে তাদের ছাড়া ঠিক হবেনা। তিনি বলেন, এর আগে ১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন অাহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলে একটি অাদেশ জারি করে বন্দীদের সাজা অর্ধেক করেছিলেন। অর্থাৎ ১৯৮২-১৯৯০ সালে সংঘটিত অপরাধের সাজার ক্ষেত্রে ২০ বছর থাকলে ১০ বছর করা হয়। এখন এমনটি করতে হলে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
[৬] অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ কারাবাস, ভাল অাচরণ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চাইলে মুক্তির সুযোগ রয়েছে। তবে বিচারাধীন মামলায় কাউকে ছাড়া ঠিক হবেনা। কেননা তখন কাকে ছেড়ে দিবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার কাউকে দুই মাসের জন্য শর্ত স্বাপেক্ষেও মুক্তি দিতে পারে। এতে কারাগারে বন্দী সংখ্যা কমলে দুরুত্ব বজায় রাখা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
[৭] ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ মাহমুদ বাশার বলেন, কারাবিধি ৫৬৯ অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দুই তৃতীয়াংশ বা ২০ বছর পার হয়েছে এমন আসামিদের শর্ত স্বাপেক্ষে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। ২০১০ সালে বৃদ্ধ, নারী-শিশু ও অসুস্থ এক হাজারের বেশি আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি বলেন, করোনায় অন্যান্য দেশেও বন্দীদের অধিক হারে মুক্তি দিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, কম ঝুঁকিপূর্ণ বন্দীদের মুক্তি দেয়া যেতে পারে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বলেছে, যারা অসুস্থ তাদের মুক্তি দেয়া যেতে পারে। বাশার আরও বলেন, কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। তবে ছোট অপরাধিও সেখানে বড় অপরাধির সঙ্গে মিশে বিপথগামী হতে পারে। ইংল্যান্ডে বন্দীদের কমিউনিটি সার্ভিসে দেয়া হয়। তারা শর্তসাপেক্ষে জামিনে থেকে সমাজের জন্য কাজ করেন। সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড ধীরে ধীরে কারাগার বন্ধ ঘোষণা করছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
[৮] জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হিসাবে গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইরান প্রায় লাখখানেক বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, যা দেশটির পুরো বন্দিসংখ্যার ৪০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া মুক্তি দিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বন্দীকে। এছাড়া ইরান কিছু বন্দীকে মহামারির পর কারাগারে ফিরে আসার শর্তেও সাময়িক মুক্তি দিয়েছে।
[৯] গত বছর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটি কমিটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের কারাগারের ৮১ শতাংশ বন্দী বিচারাধীন মামলার অাসামি। যারা অপরাধী বলে প্রমাণিত নয়।
আপনার মতামত লিখুন :