শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে চুক্তির সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ ◈ শ্রীলঙ্কাকে ৬৭ রা‌নে হারা‌লো  জিম্বাবুয়ে  ◈ রায়ের পর হাসিনাকে ফেরত দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে ◈ রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি, চার মাসে এলো এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা ◈ প্রবাসী ভোটারদের সতর্কতা: ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না দিলে পোস্টাল ভোট বাতিল ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বিষয়ে যা জানালেন শিশির মনির ◈ বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অনুমোদন ◈ ১৯ দিনে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ◈ ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ, আগুন ◈ জার্মা‌নি‌কে হা‌রি‌য়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালের পথে ভারত

প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৯:৫৫ সকাল
আপডেট : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৯:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুইডেনের করোনা যুদ্ধের পরিসংখ্যান এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা

ডা: বিপ্লব শাহনেয়াজ : সুইডেনে আজ পর্যন্ত প্রায় ২২০০ জন কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ করেছেন যা অন্য স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলির চেয়ে বেশী।মৃতদের মধ্যে প্রায় ৫০% হসপিটালে এবং ৫০% ওল্ডহোমেই মৃত্যুবরণ করেছে এবং হসপিটালে তাদের আনা হয়নি কারন তাদের বায়লোজিক্যাল বয়স এবং এডভান্সড ক্যান্সার সহ অন্য কো-মরবিডিটির জন্য তাদের কোন চিকিৎসাই কার্যকরী হতো না- এমনকি তারা পরিবহনের ঝক্কিটুকুও সহ্য করতে পারতো না। প্যালিয়াটিভ চিকিৎসা তাদের মৃত্যুকে সহজতর করেছে। অনেক দেশ তাদের পরিসংখ্যানে শুধু মাত্র হসপিটালে মৃত্যুবরণ করাদের সংখ্যা গন্য করেছে; সুইডেন হসপিটাল এবং ওল্ডহোম সহ কোভিডের সব মৃতদের লিপিবদ্ধ করেছে। কোভিডে সুইডেনে মৃত্যুর হার এর জন্য তুলনামূলক ভাবে অন্য নরডিক দেশগুলির চেয়ে বেশী - এর সাথে অবশ্য একটি ব্যর্থতা রয়েছে তা হলো বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমন নিয়ন্ত্রন না করতে পারা।

মৃতদের বয়সের উপাত্ত:
> ৯০ = ৫২৬ জন
৮০-৮৯ = ৮৭০ জন
৭০-৭৯ = ৫১৪ জন
৬০-৬৯ = ১৭১ জন
৫০-৫৯ = ৪৬ জন
৪০-৪৯ = ২৪ জন
৩০-৩৯ = ৮ জন
২০-২৯ = ৬ জন

দেখা যাচ্ছে ২২০০ জন মৃতদের মধ্যে ১৯১০ জনের বয়সই ৭০ এর উর্ধে। ৭০ এর নীচে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সংখ্যা ২৬০ জনের মতো এবং তাদের মধ্যেও অনেকে অসুস্থ ছিলেন।

সুইডেনের মোট জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। এরমধ্যে মাত্র ১৮৭০০ পজিটিভ নিবন্ধিত; সিংহভাগ রোগী রাজধানী ষ্টকহোমে- আজ পর্যন্ত রাজধানীর এক তৃতীয়াংশের মতো জনগোষ্ঠি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত - অনেকেই মৃদু অথবা কোন উপসর্গ ছাড়াই সংক্রমিত হয়েছে।

সুইডেন WHO এর টেষ্ট টেষ্ট টেষ্ট না করে শুধুমাত্র কঠিন ভাবে আক্রান্ত যারা হসপিটালে ভর্তি হয়েছে, ওল্ডহোমে এবং ট্রেসিং এর কারনে স্বাস্হ্যকর্মীদের PCR টেষ্ট করিয়েছে।

উপসর্গ ছাড়া জনগোষ্ঠির মধ্যে রেনডাম পদ্ধতিতে এন্টিবডি টেষ্ট করে - ধারনা করা হচ্ছে মে মাসের মধ্যে রাজধানীর অর্ধেক জনগোষ্ঠি ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রমিত হবে।

লকডাউন (সুইডিস রাজনীতিবীদদের মতে ব্যক্তি স্বাধীনতার বিপক্ষে একটি রাষ্ট্রের একটি কঠোর নীতি) এর পথ না ধরে জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রেখে দীর্ঘমেয়াদী মহামারী প্রতিরোধক পন্থা গ্রহন করে সুইডেন আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছে। চুড়ান্ত মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। সুইডিস কৌশলের মূল লক্ষ্যই ছিলো এটি সিংহভাগ জনগোষ্ঠি মৃদু ভাবে অথবা উপসর্গহীন ভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হোক এবং যে পরিমান জনগোষ্ঠির হসপিটালে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে তাদের জন্য হসপিটালের অবকাঠামো তৈরী করা, বেড এবং আইসিইউর সংখ্যা বাড়ানো। এ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে সংক্রমনের কার্ভ আস্তে আস্তে সমতলের দিকে যাচ্ছে - এখন পর্যন্ত হসপিটাল এবং আইসিইউ র অনেক বেড খালি - অর্থাৎ প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত যথাযথ রয়েছে।

জরুরী পেশার অভিভাবক গন যেন কাজ করতে পারে তার জন্য ১৬ বছরের নীচের বাচ্চাদের বিদ্যালয় এবং ডে-কেয়ার সেন্টার খোলা রেখেছে পুরোটা সময়েই। এ পর্যন্ত কোন স্কুলে বিপর্যয় ঘটেনি। হসপিটালে ভর্তি ও আইসিইউ তে কিছু শিশু (১৮ বছর পর্যন্ত) ভর্তি হলেও এবং মৃতের তালিকায় কেন শিশু নেই।

সুইডেনের কৌশলের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি চলতে থাকবে - কিন্তু চুড়ান্ত কিছু সময়ই বলে দিবে। তবে ইতিমধ্যেই লকডাউনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিজীবনে। ভ্যাকসিন অথবা হার্ড ইমিউনিটি না আসা পর্যন্ত ভাইরাসের তান্ডব চলবে অনেক দিন পর্যন্ত।

করোনার মতো মহামারী মোকাবিলায় লকডাউন ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির জন্য স্বল্পমেয়াদী কার্যকর কৌশল হলেও - লকডাউন কালীন দারিদ্রতা, ক্ষুধা, পারিবারিক সংঘাত, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি মতো ক্ষতিকর দিকগুলিও বিবেচনায় আনা দরকার। স্বল্পকালীন লকডাউনের মধ্যেই জনগনকে শিখতে হবে মহামারী মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতিগুলি- সামাজিক দুরত্ব, ব্যক্তিগত আচার-অভ্যেস এর পরিবর্তন। তাই কতদিন লকডাউন চললো? কত মানুষ আক্রান্ত হলো? কার টেষ্ট করা হলো আর হলো না - এটা নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ কোন সমাধান দিবে না।

সামান্য উপসর্গ নিয়ে বা কীট নিয়ে ব্যবসায়ীদের ফাদে পা দিয়ে আজকে যে নেগেটিভ প্রমানিত হলো সে কিন্তু একটু পরেই আক্রান্ত হয়ে নিজের অজান্তে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। এরজন্য যার চিকিৎসা প্রয়োজন কার জন্য টেষ্ট - বাস্তবসম্মত কৌশল। উপসর্গ থাকলে নিজে সচেতন হয়ে আইসোলেসনে থাকা। যথাযথ সময়ে স্বাস্হ্যসেবা নেয়া। এবং সুস্থ যারা তারাও নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জন্য সবচে বড় প্রয়োজন যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের জন্য স্বাস্হ্যক্ষাতকে তৈরী করা এবং স্বাস্হ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেয়া। শতকরা ৯০ ভাগই মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীন ভাবেই ভাইরাসকে মোকাবিলা করে। ১০ ভাগের জন্য স্বাস্হ্য সেবা নিশ্চিন্ত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সংক্রমন রোধের ব্যক্তিগত অভ্যাসের চর্চা।

গনহারে টেষ্ট করে আক্রান্তদের সংখ্যা গুনলে প্রাথমিক অবস্থায় আইসোলেসন করে রোগ নিয়ন্ত্রনে আনা যেতো। কিন্তু এই মূহুর্তে গন টেষ্টের প্রয়োজন নেই। যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে তাদের টেষ্ট করানো উচিত। না হলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হবে- আক্রান্তদের প্রতি ঘৃনা বা আক্রোস জন্ম নিবে। যেমনটি হয়েছে মৃতদের সৎকারের ক্ষেত্রে। প্যানিক বা আতঙ্ক নয়। ভাইরাসের সংক্রমন পদ্ধতিকে জেনে বিজ্ঞান সম্মত ভাবে মহামারীকে মোকাবিলা করি। বাস্তবতাকেও স্বীকার করি। একটা মহামারী একটা দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হবেই। অবকাঠামোর কার্যকরীতা ক্ষয়ক্ষতিকে কমিয়ে আনবে। বাংলাদেশে মোট সনাক্তকৃত রোগীর সাথে আক্রান্ত ডাক্তার নার্সদের সংখ্যা কঠিন আগামীর পূর্ভাবাস দেয়।

লেখক পরিচিতি : জরুরী সেবা বিভাগ, উপসালা ইউনিভার্সিটি হসপিটাল, সুইডেন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়