শিরোনাম
◈ পুলিশকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে: আইজিপি ◈ বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো সরকারের প্রধান কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল ◈ উপজেলায় ভোট কম পড়ার বড় কারণ বিএনপির ভোট বর্জন: ইসি আলমগীর  ◈ আত্মহত্যা করা জবির সেই অবন্তিকা সিজিপিএ ৩.৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয় ◈ কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন ◈ গোপনে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত, জাহাজ আটকে দিয়েছে স্পেন ◈ দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন: ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ◈ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী, কোটিপতি ১১৬ জন: টিআইবি ◈ ৩ বাসে ভাঙচুর, ট্রাফিক বক্সে আগুন, গুলিবিদ্ধ ১ ◈ ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারি-মোটরচালিত রিকশা চললেই ব্যবস্থা: বিআরটিএ

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৩ দুপুর
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] লকডাউন খোলার চিন্তাই করা যাবে না মে মাসের আগে

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, মে মাসের শেষ ছাড়া লকডাউন খুলে দেওয়ার চিন্তা করা ঠিক হবে না। চিন্তা করতে হবে কাদের কাজে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারও কথায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ।

[৩] ড. জাহিদ বলেন, আগে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে। কাজের অর্ডার আছে এমন ২০ শতাংশ কারখানা, যারা পিপিই ও মাস্ক বানাচ্ছে আগে তাদের খুলে দিতে হবে। পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে আস্তে আস্তে লকডাউন খুলতে হবে। পোশাক শিল্পমালিকদের কথায় একবারে কোনো কাজ করা যাবে না। তা করলে শ্রমিকদের ডেকে এনে রাতে আবার কারখানা বন্ধের মতো অবস্থা হবে।

[৪] বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা করতে হবে। এরপর শিল্প কারখানার সিদ্ধান্ত। এভাবে ধীরে ধীরে অর্থনীতি চালু করতে হবে। শ্রমিকদের ক্ষুধার্ত রেখে করোনা ঠেকানো যাবে না।

[৫] প্রণোদনা দিয়েই শুরু করা যায়। এখানে বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেখানে এই প্রণোদনা শব্দটির সঙ্গেই সমস্যা। এটা একটি বিভ্রান্তিকর। প্রণোদনা বলতে রপ্তানি, উৎপাদন বা কর্মসংস্থান এগুলোর সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। ওই ধরনের পরিস্থিতি তো বর্তমানে নেই। এ ধরনের প্রণোদনাকে (স্টিমুলাস) বলে। অর্থনীতির চাকা যদি বন্ধ থাকে তাহলে এই ধরনের স্টিমুলাস দিয়ে কি অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব? বেশিরভাগ ক্ষেত্রই তো বন্ধ। যেমন কৃষি ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ক্ষেত্রে কিছু চলছে। বিপণন ব্যবস্থার চেইন চালু রাখতেই হবে। এগুলো বাদে অন্য খাতগুলো হিসাব করলে অর্থনীতির চাকা বন্ধ।

যেখানে এ মুহূর্তে প্রণোদনা দেওয়া উচিত ছিল সেখানে খুব একটা দেখা যায়নি। যেমন প্রণোদনা দেওয়া উচিত ছিল ধান কাটার জন্য। সেখানে যন্ত্রপাতি লাগবে, যন্ত্রপাতি কেনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। ভাড়া করার মতো অবস্থায়ও নেই। এখন কৃষকরা দোটানায়।

[৬] সেখানে ভর্তুকি দিলে ওই ধরনের প্রণোদনার একটা কার্যকর আছে। ফিটব্যাক পাওয়ার সুযোগ আছে। অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ বা ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের অভাব আছে, সেখানে শ্রমিক নিয়ে আসার জন্য বা যানবাহন নিয়ে আসার জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেত। তাহলে এর কার্যকর আছে। কিন্তু যে প্রণোদনা প্যাকেজ আমরা দেখছি, যে বড় শিল্প ও ছোট মাঝারি শিল্পের জন্য বলা হয়েছে যে স্বল্প মেয়াদি স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু এগুলো দিয়ে আমরা কী অর্জন করতে চাচ্ছি তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।

[৭] যেমন ইউরোপীয় দেশগুলো প্রণোদনা দিচ্ছে এভাবে যে এটার মূল উদেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা। প্রতিষ্ঠানগুলো যেন শ্রমিকদের ছাঁটাই না করে বরং শিল্প প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে শ্রমিকদের কীভাবে বেতন দেবে। এই বেতনের ৮০ শতাংশ দিচ্ছে সরকার বাকি ২০ শতাংশ দিতে হবে মালিকদের। কেউ ৫০ শতাংশ দিচ্ছে, আবার কেউ ৭০ শতাংশ দিচ্ছে। এর মূল শর্তই হচ্ছে কেউ শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে পারবে না। বেতন দিতে হবে।

[৮] কর্মসংস্থান বাঁচিয়ে রাখা। এটা একটা উদ্দেশ্য, আরেকটা উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখা। যেমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বাড়ি ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা। পাশাপাশি লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এ কারণেই নীতি সহায়তা দেওয়া।

কিন্তু আমাদের দেশে এখানে বলা হচ্ছে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই ঋণটা নিয়ে কী করবে? ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোনটা প্রয়োজন হয় যখন শিল্প-কারখানা, দোকান অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল থাকে। সচল যখন নেই তখন এটা যদি কর্মীদের বেতন-ভাতায় চলে যায় তাহলে বিষয়টা কেমন হলো। কর্মসূচিতে সে রকম সুনির্দিষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছে না।

[৯] আমরা একটা আশা করে আছি, হয়তো মালিকরা শ্রমিকদের ছাঁটাই করবে না। যেমন ৫ হাজার কোটি টাকার যে প্যাকেজ সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল থাকতে হবে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হবে এবং বিগত তিন মাসের শ্রমিকদের বেতন সিটের প্রমাণ থাকতে হবে। তার পরও টাকা মালিকদের দিচ্ছে না। সরাসরি শ্রমিকদের দিচ্ছে। এই ধরনের সুবিধা অন্য ক্ষেত্রেও থাকা দরকার ছিল। একটা প্ল্যান থাকা দরকার। শ্রমিকদের একটা ডেটাবেজ থাকা দরকার ছিল। বেতনের একটা অংশ সরকার দেবে বাকি অংশ মালিকরা দেবে। আর পুরো টাকা তো সরকারের দেওয়া ঠিক নয়। মালিকরা তো এতকাল লাভ করেছে। বিশেষ করে বড় শিল্প কারখানার মালিকরা তো এতদিন লাভ করেছে। এখানে ম্যাচিং ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।

[১০] মালিকদের একবারে কোনো দায়িত্ব নেই এটা তো হতে পারে না। এত বছরের পর বছর ব্যবসা করে কী করেছে যে এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারবে না। তাহলে এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখে লাভও বা কী? বিপদের সময় কাজে লাগে না। এটার অবজেকটিভটা স্পষ্ট নয়। এখানে অনেক প্রয়োজন আছে। স্বাস্থ্য খাতে, খাদ্য খাতে, অবকাঠামো খাতে প্রয়োজন আছে। ওগুলোকেও তো সহায়তা দিতে হবে।

[১১] এক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেওয়া। কর্মসংস্থান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কর্মীরা যেন জীবিকা চালানোর মতো বেতন পায় এবং সেটা সরকার ও মালিকপক্ষ শেয়ার করে চালাবে। অন্যদিকে ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই টাকা তো সরকার দিচ্ছে না। এর সিংহভাগ টাকা ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা ব্যাংকের নিজের তহবিল থেকে দিতে হবে।

[১২] শিল্প প্রতিষ্ঠানকে না হয় ব্যাংক সহজে ঋণ দিল কিন্তু ছোটদের বেলায় কী হবে? এখানে জটিলতা সবচেয়ে বেশি। কারণ ব্যাংক মালিকরা গ্রাহকের ডিপোজিট ভেঙে অনিশ্চয়তার দিকে কেন যাবে? ব্যাংকে ডিপোজিট নেই, ঋণ তুলতে পারছে না, রেমিট্যান্স নেই এরপর লকডাইনের কারণে নগদ টাকা অনেকেই তুলে ফেলছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলো চাপে আছে। ব্যাংকগুলো তো ডিপোজিটরদের টাকা দেবে। এই ব্যবসায়ীরা কবে সচল হবে, কবে ঋণ ফেরত দেবে তার নিশ্চয়তা নেই। এখানে তো অনিচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। আর ইচ্ছাকৃতরা সুযোগটা নিয়ে ঋণ ফেরত দেবে না।

[১৩] এ অবস্থায় ভালো ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহী কেন হবে? আর দিলেও যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তাদের দেবে। যারা বিপদকে ট্যাকেল দেওয়ার মাধ্যমে লাভ করে টাকা ফেরত দিতে পারবে। কিন্তু যারা বিপদগ্রস্ত তাদের তো ঋণ দিতে চাইবে না। কারণ তাদের বিষয়ে একটা আতঙ্ক থেকে যাচ্ছে যে তারা কীভাবে এই ঋণ শোধ করবে। কেউ ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিতে যাবে না। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে তো টিকিয়ে রাখতে হবে।

[১৪] এখানে উচিত ছিল সরকারের পক্ষ থেকে একটা গ্যারান্টি দেওয়া। ছোট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ শোধ করতে না পারে তাহলে সরকার শোধ করবে। কিন্তু এখানে সেই গ্যারান্টি নেই। এখানে শতভাগ না হলেও ৬০ শতাংশ অথবা ৭০ শতাংশ সরকারের পক্ষ থেকে গ্যারান্টি থাকত তাহলে ব্যাংকগুলো স্বস্তি বোধ করত। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেই উদ্দেশ্যে ঋণগুলো ব্যবহার হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঝুঁকিটা যদি সব ব্যাংকে চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভালো ব্যাংকাররা নিজের প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না।খ- খ- পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত করা দরকার। এভাবে খ- খ-ভাবে এত ধীরে এগুলো সব শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কৃষকদের আর্থিক বিষয়ের আগে প্রয়োজন সাপ্লাই চেইন সচল রাখা।

খাদ্য সরবরাহ সচল রাখা। ত্রাণসামগ্রী বিতরণে যে পরিমাণ সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী ও দলীয় নেতাকর্মীদের লাগানো হয়েছে, এটা না করে যদি অসহায় মানুষদের অর্থ সহায়তা দিয়ে এ জনশক্তি কৃষকের পাশে দাঁড়াত এবং খাদ্য সরবরাহ চেইন সচল রাখত তাহলে দেশ বড় উপকৃত হতো।আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়