মির্জা ইয়াহিয়া : করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক। জনগণকে ঘরে রাখতে প্রশাসন দিনে দিনে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে আছি ঠিকই, কিন্তু নিজের পরিবার, বিদেশে ছেলেমেয়ের অবস্থান, দেশের মানুষ, সারা পৃথিবী নিয়েই একধরনের টেনশন তৈরি হয়েছে মনের মধ্যে। কোভিড-১৯ কবে শেষ হবে? দিন যতো যাবে আমাদের দেশে অভাব-অনটন ততো মাথাচাড়া দেবে। কারণ লকডাউন পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া প্রায় সবার ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব চিন্তার মধ্যে আজই পেলাম ধানমন্ডির এক সেলুনের নরসুন্দর মুরাদের ফোন। মাঝে মধ্যে চুল কিছুটা সাইজ ও সেভ করতে যাই এই যুবকের কাছে। এটা প্রায় এক যুগের রুটিন। আগে ছেলেকেও নিয়ে যেতাম। এখনো দেশে ফিরলে সে ধানমন্ডির এই নরসুন্দরের কাছে যায়। মূল কথায় আসি, সেলুনের সেই নরসুন্দর ফোন দিয়ে বিপদের কথা জানালো। ওদের এখন কোনো কাজ নেই। সামনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ। হাতে যে জমানো টাকা ছিলো সেটাও শেষ। এখনি সংসারে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। অনেকটা অসহায়ের মতো কথা বললো। দ্রুতই আসতে বললাম। যথাসাধ্য সহায়তা করলাম এই যুবককে। কিন্তু এতে আর কয়দিন চলবে? বড়জোর এক মাস, তারপর? ধানমন্ডির কিছুটা ভদ্রস্থ সেলুন কর্মীর এই অবস্থা। তাহলে সারাদেশের নাপিত বা নরসুন্দরদের অবস্থা কী? আমাদের দেশে এই পেশায় যারা আছে, তারা অনেকটা দিন আনে দিন খায় অবস্থার মধ্যে থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেলুন বন্ধ। খোলা থাকলেও লোকজন আর ভয়ে সেলুনে যায় না।
কেউ কেউ তাই ঘরে ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। অনেকে চুল-দাড়ি কাটাই বন্ধ করে দিয়েছে। দেশ-বিদেশে সর্বত্রই এই পরিস্থিতি। মিডিয়ায় ছবি এসেছেÑ ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলির চুল মেশিনে ছেঁটে দিচ্ছেন তার স্ত্রী বলিউড নায়িকা আনুশকা শর্মা। ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গিনীও মেশিন দিয়ে তার চুল ছেঁটে দিচ্ছেন। যা হোক পরিস্থিতিতে যেদিকেই যাক না কেন, সেলুনে যাওয়ার আগেও মানুষ অনেক ভাববে। এসব কারণে নাপিত, নরসুন্দর, হেয়ার এক্সপার্টÑ যে নামেই ডাকি চুল-দাড়ি কাটায় নিয়োজিত সব মানুষগুলো বিপদে আছে। একদিকে এখন সংসার চালানোর চিন্তা। অন্যদিকে কাজের ক্ষেত্র নিয়ে অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতির শেষ কোথায়, এখনো আমরা কেউ জানি না। আপাতত সবার উচিত অসহায় ও অভাবী মানুষদের পাশে থাকা। ফেসবুক থেকে