ইসমাঈল আযহার: [২] ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। অন্যায়ভাবে হত্যা না হওয়ার ব্যাপারে ইসলামী রাষ্ট্র পরিপূর্ণ গ্যারান্টি দিয়েছে। আর বিনা অপরাধে কাউকে হত্যা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা কোন বৈধ কারণ ছাড়া আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এরুপ কাউকে হত্যা করো না।’
[৩] আর ইসলামী রাষ্ট্র একজন নাগরিককে যথাযথভাবে খাদ্য ও জীবিকার অধিকার প্রদান করে। রাষ্ট্রের কর্তব্য হবে এমন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে প্রত্যেক নাগরিক জীবিকার্জন করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি নিজ চেষ্টায় সম্মানজনক জীবিকা না পায়, তবে রাষ্ট্রের কর্তব্য তার জীবিকার ব্যবস্থা করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এসেছে ‘আর জমিনে এমন কোন প্রনী নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেনি।’ অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি তোমাদের জীবিকার দায়িত্ব নিচ্ছি এবং তোমাদের সন্তানদেরও।’
[৪] ইসলামী রাষ্ট্রে নাগরিকদের চলা ফেরার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজ রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে পূর্ণমাত্রায় চলাফেরা করতে পারবে। আর এর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে সারাবিশ্বের যোগসূত্র স্থাপিত হবে। ব্যবসায়িক কাজে বিদেশে ভ্রমন করার ব্যপারে পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা জমিনের পরতে পরতে ভ্রমণ কর এবং তার ফলে উপার্জিত রিজিক আহার কর।’ (সূরা মুলক -১৫)
[৫] ধর্মচর্চার অধিকার বলতে ব্যক্তির ইচ্ছামত ধর্ম পালন করার স্বাধীনতাকে বুঝায়। প্রত্যেক নাগরিক ইচ্ছামত ধর্মগ্রহণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও প্রচার করতে পারবে। ইসলামী আইন কারোর ধর্মে হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ করেছে। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে,‘ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই।’ (সূরা বাকারা -২৫৬) অন্য আয়াতে এসেছে, “মুমিন হবার জন্য আপনি কি লোকদেরকে বাধ্য করবেন”? (সূরা ইউনুস -৯৯)
[৬] ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করাও ইসলামী আইনে স্বীকৃত। এ বিধান অনুযায়ী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসানলয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করাও ইসলামী রাষ্ট্রের দায়ীত্ব। আবার ধর্মীয় শিক্ষার ব্যপারে পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত। ধর্মীয় অনুভূতির পবিত্রতা ইসলামে স্বীকৃত। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী বা ধর্মের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করা অথবা ধর্মীয় নেতাদের গালমন্দ করা ইসলামী রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে যে সকল উপাস্যকে ডাকছে, তোমরা তাদেরকে গালি দিওনা।’ (সূরা আনয়াম -১০৮)
[৭] বাক স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারকে বুঝায়। ব্যাপকার্থে- মতামত প্রকাশের অধিকার, লেখার অধিকার, আদর্শ প্রচারের অধিকার, সংবাদপত্র প্রকাশের অধিকার, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রভৃতি বাক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম নির্বিঘ্নে সত্য প্রকাশ ও মতামত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্তব্য হচ্ছে, সত্য কথা নির্ভিকচিত্তে প্রকাশ করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত।’ (সূরা নিসা -১৩৫)
[৮] ইসলামী রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক কেবল নিজ নিজ অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করবে। কারো অপরাধের দায়ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া কিছুতেই সমিচীন নয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।’ (সূরা নজম -৩৮) অপরাধের উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানী করা, গ্রেফতার করা, মামলা করা, নির্বাসন দেওয়া কিংবা শাস্তি প্রদান করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে মুমিনগন! যখন কোন ফাসেক তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তার সত্যতা যাচাই করে দেখ। যেন এমন না হয় যে, না জেনে তোমরা কারো অসুবিধা সৃষ্টি করবে এবং পরে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে।’ (সূরা হুজুরাত -৬)