সমকাল : [২] দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক সি জং কিম ১৫ মার্চ বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তার ঠিকানা উল্লেখ করেছেন, বাসা নম্বর ১২/২, ২ নম্বর রোড, খুলশী আবাসিক এলাকা। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই ঠিকানায় রয়েছে ১টি রেস্টুরেন্ট। সি জং কিম এ রেস্টুরেন্টের মালিক নন, মাঝে মাঝে খেতে আসেন শুধুমাত্র। অথচ এখানেই তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলে বিমানবন্দরে মুচলেকা দিয়ে এসেছিলেন।
[৩] একইভাবে ১১ মার্চ বাংলাদেশে আসেন জাপানের নাগরিক আকিরো সাইতো। ইমিগ্রেশনে তার দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, উত্তর খুলশী এলাকার ২ নম্বর রোডের ৬১/সি নম্বর বাসায় তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। অথচ ওই বাড়ির কেয়ারটেকার জানান, জাপান থেকে ফিরেই তিনি নিয়মিত চট্টগ্রাম ইপিজেডের কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
[৪] চট্টগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি কিংবা বিদেশিদের ঠিকানায় গিয়ে এমন অসত্য তথ্য পাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা। তারা বলছেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিরা বিমানবন্দরে যে ঠিকানা দিয়েছেন, তার প্রায় অর্ধেকেরই দেখা মেলেনি ওইসব ঠিকানায়। অথচ খুলশী ও চান্দগাঁও এলাকাকে ডেঞ্জারজোন মনে করা হচ্ছে। কারণ চট্টগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৯৭৩ জনের মধ্যে প্রায় ৬’শজন তাদের ঠিকানা লিখার সময় এ দুই এলাকার নাম ব্যবহার করেছেন।
[৫] এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খুলশীর এক বাড়িতে গত মঙ্গলবার লাল পতাকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই বাড়িতে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসা ৩০ জন বিদেশি রয়েছেন।
[৬] জানা যায়, খুলশী এলাকায় বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন দেড় শতাধিক। অভিজাত এলাকা হওয়ায় বিদেশিদের অনেকে খুলশীকে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরমধ্যে ৬৭ জনের ঠিকানা আছে খুলশী এলাকার পূর্ব পাহাড়তলী ও পূর্ব নাছিরাবাদে। আর শতাধিক ব্যক্তির ঠিকানা রয়েছে দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার আগ্রাবাদ সার্কেলে। গত মঙ্গলবারও তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিলো।
[৭] চান্দগাঁও সার্কেলের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চান্দগাঁও, মোহরা, হিলভিউ, ষোলশহর এলাকায় ৪০১ জনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়িতে গিয়ে অর্ধেক বিদেশিকেও পাওয়া যায়নি তাদের ঠিকানায়।
[৮] গত মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরের ৪টি বাড়িতে গিয়ে কেবল দুবাইফেরত একজনকে বাড়িতে পাওয়া যায়। বাকিরা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও হাটহাজারীতে চলে গেছেন। চান্দগাঁও এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইন হিসেবে ব্যবহৃত ঠিকানাও ভুয়া। অনেকে পাসপোর্টে থাকা ঠিকানাকে হোম কোয়ারেন্টাইনের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করলেও সরজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও ১৪ দিন পার শেষ না হলে, তাদেরকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম