সমীরণ রায়: [২] শেখ হাসিনা আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড় - সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।
[৩] তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং বহু ত্যাগ-তিক্ষিার ফসল। ১৯৪৮-৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়-দফা-১১-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র নির্বাচনের পথ পেরিয়ে আমরা উপনীত হই ৭১’র ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে।
[৪] আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে দাাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম স্তব্ধ করে দিতে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসক তাঁকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি জাতি ৯ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় হয়।
[৫] তিনি বলেন, পাকিস্তানের জেলে ১০ মাস বন্দি থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ৭২’র ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের। মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা, শহিদ পরিবার, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, তাঁদের প্রতিষ্ঠিত করা সমস্ত কাজ করেছিলেন তিনি।
[৬] শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, তখনই ৭৫’র ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা তাঁকে পরিবারের হত্যা করে। আমরা দুবোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই-মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল-কামাল ও জামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের।
[৭] বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।