আসাদুজ্জামান সম্রাট: [২] মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য ছহিউদ্দীন বিশ্বাসের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার। ১৯৯০ সালে এদিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।এই নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল ছাত্রজীবন থেকেই। ছহিউদ্দীন বিশ্বাস ১৯২৩ সালে অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার তেহট্ট থানার অন্তর্গত লালবাজার এলাকার প্রভাবশালী এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ ইয়াকুব বিশ্বাস সমাজে একজন সম্মানিত এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে তৎকালীন ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাতা মোছাঃ সামছুন নেছা ছিলেন গৃহিণী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর ছহিউদ্দীন বিশ্বাস সপরিবারে তৎকালীন নদীয়া জেলাধীন মেহেরপুর মহকুমায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
[৩] তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার ভি.জে হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ভর্তি হন, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় দেশ ও জাতির সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। মেহেরপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম সহিউদ্দীন বিশ্বাস ১৯৫৮ সালে মেহেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচত হন। এরপর ১৯৬৬ সালে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন।
[৪] তিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রথম জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন, ঘনিষ্ঠ সহচর ছহিউদ্দীন বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল তৎকালীন বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমান মুজিবনগর) অনুষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে বাংলার সূর্য সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ্য করা, ভারতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প প্রশিক্ষন প্রদান, খাবার সরবরাহ করা, সাধারণ জনগণদের নিরাপদ স্থানে প্রেরনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন।
[৫] স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে পুনরায় গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন, নির্মাণ করেন বিভিন্ন রাস্তাঘাট,মসজিদ, মন্দির সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ২য় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হবার পর বঙ্গবন্ধুর দুই বোন, শেখ ফজলে ফাহিম পরশ, শেখ ফজলে নুর তাপসসহ তার পরিবারের জীবিত সদস্যদের ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সহযোগিতা করেন ছহিউদ্দীন বিশ্বাস। ১৯৭৫ সালে তিনি মেহেরপুরের গভর্ণর নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মেহেরপুর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলেন।
[৬] ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩য় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের সেবা, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন ছহিউদ্দীন বিশ্বাস।
তাঁর পুত্র ফরহাদ হোসেন এমপি সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।