ডেস্ক রিপোর্ট : [২] কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (ফাইল ছবি)করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না ঘটে সেজন্য দেশের সব পর্যটন স্পটে মানুষের গমন নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু, ঘরে না থেকে এ সুযোগে অনেক পরিবারই দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাচ্ছে। ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও কুমিল্লার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীদের আগমণে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
[৩] কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত : পর্যটন শহর কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কক্সবাজারে সব ধরনের জনসমাগম ও পর্যটক আগমনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটক আসছে এবং সৈকতে নামছে। সরকার ছুটি দিয়েছে যাতে এই রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে। সেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটা বিপজ্জনক হবে। এ কারণে আমাদের পক্ষ থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’
[৪] অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘সৈকতে পর্যটক ভ্রমণে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের সব হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজে সভা-সমাবেশ, যেসব প্রোগ্রামে জনসমাগম হয় এ ধরনের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সৈকতসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে।
[৫] বুধবার (১৮ মার্চ) বিকালে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সৈকতে মাইকিং শুরু করা হয়েছে। করোনার ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।
[৬] পতেঙ্গা সৈকত : চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বুধবার (১৮ মার্চ) বিকালে সিএমপির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
[৭] এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জনসমাগমের কারণে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছি। এখন থেকে সৈকত এলাকায় আর কোনও দর্শনার্থীকে যেতে দেওয়া হবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’
[৮] এর আগে গতকাল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কল কারখানা বন্ধ থাকায় এদিন বিকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে মানুষের ঢল নামে। ছুটির দিন উপভোগ করতে বিকালে পরিবার নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যান অনেক নগরবাসী। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের এই জনসমাগমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এটি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপরই বুধবার বিকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম নিষিদ্ধ করলো পুলিশ।
[৯] কুমিল্লার সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ : জনসমাগম এড়াতে কুমিল্লার নগর উদ্যান এবং শিশু পার্কসহ সরকারি-বেসরকারি সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহার ও কোটবাড়ী জাদুঘরসহ জেলার সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
[১০] কুমিল্লার কোটবাড়ী ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারের কাস্টোডিয়ান মো. হাফিজুর রহমান জানান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলার সব প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থানগুলো মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা কোটাবাড়ীর শালবন বিহার, কোটবাড়ী যাদুঘর, রূপবান মূড়া, ইটাখোলা মূড়া।
[১১] এদিকে নগরউদ্যান ও শিশু পার্কসহ বেশ কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে কুমিল্লা নগরীর ঈদগাহ মাঠের ফটকেও তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যাতে না ছড়ায় সেজন্য জনসমাগম হয়, এমন জায়গাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকোপ কমলে এসব স্থান পুনরায় খুলে দেওয়া হবে।’
[১২] এছাড়াও কুমিল্লার আউটার স্টেডিয়ামে চলমান বাণিজ্য মেলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খেলার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তরুণদের সমাগমের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব স্থান বন্ধ থাকবে বলে জানান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম হয় কুমিল্লার এমন দর্শনীয় স্থান, নগর উদ্যান, শিশু পার্কসহ সব সরকারি-বেসরকারি বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা আউটার স্টেডিয়ামে চলমান বাণিজ্য মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তরুণদের খেলার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম কমানোর জন্য স্থানগুলো সাময়িক বন্ধ রাখার নিদের্শ দেওয়া হলেও, ভাইরাসের প্রকোপ কমলে আবারও খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
[১৩] রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা : পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বুধবার (১৮ মার্চ) রাত ৯টায় এ তথ্য জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ।
[১৪] জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রাঙামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা যদি কেউ অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।’
[১৫] রাঙামাটি জেলা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, বুধবার যারা রাঙামাটি এসেছেন, তাদের বৃহস্পতিবার সকালে রুম ছেড়ে দিতে বলা হবে। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে কাউকে রুম ভাড়া দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে সব হোটেল মালিকদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।’
[১৬] এদিকে, বুধবার রাতে রাঙামাটি শহরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসাধারণকে সচেতন থাকতে মাইকিং করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ সময় অপ্রয়োজনে কাউকে ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ জানানো হয়।