ডেস্ক রিপোর্ট : একটি মিডিয়ার সাথে আলোপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যেকোনো কোম্পানির মালিকপক্ষ কোম্পানির শ্রমিকদের জন্য অধিকর্তা হিসেবে বিবেচিত। আর অধিকর্তার ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে, অধিকর্তারা তাদের অধীনস্থের কাজকর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। সুতরাং কর্মচারীদের নামাজে অংশগ্রহণে বাধ্যবাধকতা জারি করা কেবল প্রশসংনীয়ই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে মালিকপক্ষের দায়িত্বও বটে। সূত্র: ফতেহ টুয়েন্টি ফোর।
তিনি বলেন, তবে হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে নামাজে অংশগ্রহণ না করলে কোনো শ্রমিকের পারিশ্রমিক কর্তনের অনুমোদন ইসলাম দেয়নি। এটা আপত্তিজনক। নামাজে অংশগ্রহণ না করলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক কর্তন করা যাবে না।
সম্প্রতি গাজীপুরের মালটিফ্যাবস লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি তাদের কারখানায় কর্মরত সকল সেকশনের দায়িত্বশীল ও শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে একটি নোটিশ জারি করে। নোটিশে বলা হয়, উল্লেখিত কোম্পানিতে কর্মরত সকল স্টাফকে প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে (যোহর, আসর ও মাগরিব) নামাজ পড়তে হবে। এবং পাঞ্চ মেশিনে ফিঙ্গার পাঞ্চ করতে হবে। যদি কোনো স্টাফ মাসে ৭ ওয়াক্ত পাঞ্চ করে নামাজ না পড়েন, তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির বেতন হতে ১ দিনের সমপরিমাণ হাজিরা কর্তন করা হবে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কোম্পানিটিতে এ নিয়ম কার্যকর করা হয়।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কোনো আইন দিয়েই এটার বাধ্যবাধকতা দেয়া যায় না। ইসলাম ধর্মও বলে না কারো উপরে ধর্ম চাপিয়ে দেয়া যাবে। তাই তেমন কিছু হলে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা সম্পর্কে কথা বলেন শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মিজানুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, বেতন কর্তনের বিষয়টা বাদ দিলে উল্লেখিত কোম্পানি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। এখানে অপরের ওপর ধর্ম চাপানোর অভিযোগ কেন আসছে, তা আমার বুঝে আসছে না। ইসলাম কারও ওপর ধর্ম চাপিয়ে দিতে নিষেধ করেছে ঠিক, কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে নির্দেশও দিয়েছে নিজেদের অধীনস্থ লোকদের কর্মকাণ্ড তদারকি করতে। কেয়ামতের দিন এ ব্যাপারে প্রত্যেক দায়িত্বশীল স্ব স্ব অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেসিত হবেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, পরিবারের অভিভাবক যেমন তাঁর পরিবারের লোকজনের আমল-আখলাকের তদারকি করেন, তেমনি কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্তৃপক্ষও তাদের প্রতিষ্ঠানের লোকজনের আমল-আখলাকের তদারকি করবেন। এটাই ইসলামের নিয়ম।
তিনি বলেন, মালটিফ্যাবস লিমিটেড নামের যে কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের নামাজে বাধ্যবাধকতার নোটিশ জারি করেছে, এটা একান্তই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। এটাকে ইসলাম প্রশংসার চোখে দেখে। ধর্মপ্রাণ যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা জারি করতে পারে। নিয়োগের আগে কর্মীদেরকে জানিয়ে দিতে পারে যে, নামাজ না পড়লে এখানে চাকরি করা যাবে না। কারণ, যারা কাজ করবে, তারা কার্যত ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ।
মুফতী মিজান আরও বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদেরকে প্রথমে উৎসাহ প্রদান, তারপর বাধ্যবাধকতা জারি করলে কর্মীদের কাছে ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, তবে নামাজ না পড়ার কারণে কোনো কর্মীর পারিশ্রমিক কর্তন করা ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। কোম্পানি তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারে, এই অধিকার তার আছে, কিন্তু যে কাজ সে করে ফেলেছে, সে কাজের পারিশ্রমিকের হকদার সে হয়ে গেছে। নামাজ না পড়ার কারণে তাকে তার পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :