নিউজ ডেস্ক : বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধন বিষয়ে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশনের শুনানি আগামী ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ইত্তেফাক
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষের করা এ আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন
আদালত বলেন, ২০০৩ সালে এ রায় দেয়া হয়েছে। এতদিন পরেও এ রায়ের বাস্তবায়ন কোথায়? যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে এ রায় দিয়ে লাভ কি? তাহলে এ রায় বাতিল করে দেই। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমরা রায় বাতিলের কথা বলছি না। শুধু রিভিউ চেয়েছি।
আদালত বলেন, আপনাদের রিভিউ আবেদন স্পষ্ট নয়। রায়ে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলোর কোথায় কোথায় আপত্তি সেটা সুনির্দিষ্ট করে বলুন। এই রায় পুরোটা রিভিউ হবে না। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি যে কারো ক্ষেত্রে হতে পারে। যদি কেউ ডিস এপিয়ারেন্স (নিখোঁজ) হয়ে যায় তার দায় দায়িত্ব রাষ্ট্র নিবে?
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, রিটকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট ইদ্রিসুর রহমান ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জঙ্গিসহ বর্তমান অবস্থা নিয়ে কোন কোন নির্দেশনা আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সে বিষয়গুলো তুলে ধরে রায় রিভিউ চেয়েছি। কারণ বর্তমান সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। শিশু ও নারী ধর্ষণ, জঙ্গি উত্থান, মাদকের প্রসার, জুয়াখেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এসব প্রয়োজন। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন কাচেরঘরে রেখে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার। এতে তো জঙ্গি বা অপরাধ দমন অকার্যকর হয়ে যাবে। ইদ্রিসুর রহমান বলেন, কেউ মিসিং হলে দুই/তিন বছর খোঁজ নেই। এটা নিয়ে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারকদের প্রতি কিছু নির্দেশনা দেন। যুগান্তকারী এই নির্দেশনায় বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোনো ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। গ্রেপ্তার অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা যদি পরিচয়পত্র দেখতে চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই তা দেখাতে হবে। গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঐ ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবকে গ্রেপ্তারের সময় এবং স্থান জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারকদের প্রতি জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেইস ডায়েরি (তদন্তের দিনপঞ্জি) ছাড়া কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক ঐ ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও পুলিশ রিমান্ড প্রশ্নে ১৩ বছর আগে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এই রায় পুনঃবিবেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ, ১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুবেল মারা যায়। পুলিশ হেফাজতে রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রিট আবেদন দায়ের করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. হামিদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার বিধান ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনে যুগান্তকারী রায় দেন।
আপনার মতামত লিখুন :