প্রভাষ আমিন : জুনিয়র টাইগাররা যেদিন ভারতকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো, তার পরদিন সিনিয়র টাইগাররা পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। আমি বলছি না যে একটি পরাজয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখতে ভালো লাগে না। আমি শুধু বলছি, সিনিয়র টাইগারদের কাছে যেন আকবর আলীর ৪৩ রানের ইনিংসটির ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতির দাবি মেনে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, তার একটি শিক্ষামূলক ক্লাস হতে পারে এটি। রাওয়ালপিন্ডি আর পচেফস্ট্রুম আমাদের ক্রিকেটের দুই রূপ দেখিয়ে দিলো। দেখলাম বিবর্ণ বর্তমান, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তবে যে পঞ্চপা-বে ভর করে দীর্ঘদিন চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট তা এখন এলোমেলো প্রায়। মাশরাফি অনেক আগেই টেস্ট ছেড়েছেন। সাকিব নিষিদ্ধ। মুশফিক পাকিস্তান যাননি। অধিনায়ক মুমিনুল নতুন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন হালছেঁড়া তরী। ভরসা হলো তরুণরা উঠে আসছেন।
এখন যারা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছেন, দুই বছর পর তারাই জাতীয় দলে খেলবেন। মাশরাফি, সাকিব, তামিমের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন শরিফুল, ইমন, আকবর আলীরা। কিন্তু আমার শঙ্কাটা অন্যখানে। এই যুবারা ততোদিন ভালো থাকবেন তো? বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই সব দেশের মূল দলের ভিত্তি তৈরি হয়। কিন্তু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আমরা অন্য দলের সঙ্গে সমানতালে লড়লেও মূল দলে যেতে যেতে পার্থক্যটা অনেক বেড়ে যায়। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে ভারত পায় বিরাট কোহলি, আমরা পাই সাব্বির, নাসির। এই সমস্যার উৎসটা খুঁজে বের করতে হবে। না হলে এই অনূর্ধ্ব-১৯-এর সাফল্যেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
আগেই বলেছি, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা কোনো ফ্লুক নয়। আমরা যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছি। কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা যোগ্য হয়ে উঠলো? তরুণরাই বলছেন, তাদের সাফল্যযাত্রার কথা। দুই বছর ধরে এই টিমটি বিশ্বকাপ শিরোপাকে পাখির চোখ বানিয়েছে। দুই বছর ধরে তারা একসঙ্গে। কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিত অনুশীলন আর যুথবদ্ধতা তাদের এক পরিবার বানিয়ে দিয়েছে, যোগ্য করে তুলেছে। এখন তাদের এই সাফল্যক্ষুধা জাগিয়ে রাখতে হবে। এখানেই আমাদের সংগঠকদের কাজ। শচিন টেন্ডুলকার আর বিনোদ কাম্বলি স্কুল ক্রিকেটে জুটির বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। তখন সবাই বলাবলি করছিলো, কাম্বলি শচিনের চেয়েও প্রতিভাবান। কাম্বলির প্রতিভার ঝলক বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছেও।
কিন্তু তার প্রতিভার ঝলক পলকেই ফুরিয়ে যায়। অর্থ-যশ-খ্যাতির মোহে কাম্বলির ক্রিকেট হারিয়ে গিয়েছিলো। আর তার চেয়ে ‘কম প্রতিভা’ধর শচিনের আলোয় আলেকিত হয়েছে গোটা বিশ্ব। এখন আমাদের যুবারা কাম্বলি হবেন না শচিন, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব কিন্তু বোর্ডের। সংবর্ধনা, পুরস্কার ও প্রশংসায় যেন আমরা তরুণ এই ক্রিকেটারদের ফোকাসটা নষ্ট না করে দিই। খ্যাতির আলোতে যেন তাদের চোখ ঝলসে না যায়। বোর্ডের উচিত হবে তাদের দিকে নজর রাখা, তাদের পরিচর্যা করা। তাদের সব ধরনের সমস্যার সমাধানের গ্যারান্টি দিতে হবে। তরুণদের বোঝাতে হবে শুধু ভালো খেললেই ভালো ক্রিকেটার হওয়া যায় না। চেষ্টা করতে হবে বাগানের সবগুলো ফুলই যেন ফোটে, সব প্রতিভাই যেন বিকশিত হয়। তবে সব কুঁড়ি সবসময় ফুল হতে পারে না, ঝরে যায়। মালি ভালো হলে ঝরে পড়ার সংখ্যা কম হয়, ফুলের সংখ্যা বাড়ে। আর বেশি ফুল ফোটাতে পারলেই আাগামী দেড় দশকের জন্য নিশ্চিন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিবর্ণ বর্তমান ভুলে উজ্জ্বল ও বর্ণাঢ্য ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে পারবো। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট