মোজাম্মেল হোসেন তোহা : রাষ্ট্রের স্বার্থে অনেক তথ্যকেই সিক্রেট বা টপ সিক্রেট ক্যাটাগরিতে ফেলে পাবলিকের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়। ১০, ২৫ বা ৫০ বছর পর্যন্ত সেগুলো গোপন থাকতে পারে। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে কিংবা কখনো কখনো এর আগেই কেউ ফ্রিডম অফ ইনফরম্যাশন অ্যাক্ট জাতীয় কোনো ধারায় রিকোয়েস্ট করলে কিংবা মামলা ঠুকে দিলে, অনেক সময় সরকার কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছু তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয়। গোপন তথ্য প্রকাশ করার এই প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে ডিক্লাসিফিকেশন। অর্থাৎ আগে কোনো ডকুমেন্ট ‘টপ সিক্রেট’ হিসেবে ক্লাসিফাইড ছিলো, এখন সেটাকে ডিক্লাসিফাই করা হয়েছে। এটা নিয়েও অবশ্য রাজনীতি চলে। যেমন ধরেন প্রেসিডেন্ট কোনো একটা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়লো। ঠিক সেই সময় প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে টপ সিক্রেট কোনো ডকুমেন্ট ডিক্লাসিফাই করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দিতে পারেন মানুষের ফোকাস ডাইভার্ট করার জন্য। কিন্তু ডিক্লাসিফাইয়ের অর্থ এই নয় যে, সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট পাবলিকের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। ধরুন কাসেম সোলায়মানিকে ঠিক কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, কোনো একটা টপ সিক্রেট ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টে এর বিস্তারিত বিবরণ আছে।
এখন বছর দুয়েক পরে কেউ যদি মামলা-টামলা করে তাহলে হয়তো সেই ডকুমেন্ট ডিক্লাসিফাই করতে পারে। কিন্তু ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ, ফিল্ডে সক্রিয় সিআইএ অফিসারদের নাম-পরিচয় এগুলো প্রকাশ করা হবে না। তখন কী করা হবে? ডকুমেন্টগুলো নিয়ে স্পর্শকাতর তথ্যগুলোকে কালো কালি দিয়ে কেটে দিয়ে এরপর প্রকাশ করা হবে। মাঝে মাঝে এই কাটাকুটি এমন পর্যায়ে যায় যে, ডকুমেন্টের আগামাথা কিছুই বোঝা যায় না। ছবিটা দেখেন, এটা একটা মুভির দৃশ্য, কিন্তু মুভিটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ‘দ্য রিপোর্ট’ নামের এই মুভিটার কাহিনি হচ্ছে সিনেট ইন্টেলিজেন্স সিলেক্ট কমিটির এক তরুণ কর্মকর্তা কীভাবে বছরের পর বছর ধরে সিআইএর বন্দি নির্যাতনের কাহিনি তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত সেই তদন্ত রিপোর্টের এক্সিকিউটিভ সামারি প্রকাশ করতে মার্কিন প্রশাসনকে বাধ্য করেছিলো।
কিন্তু ছবিতে যে রকম দেখা যাচ্ছে, টর্চারের পেছনে জড়িত হর্তাকর্তাদের নাম যেন প্রকাশ না হয়, সেজন্য কিছু কিছু পৃষ্ঠাকে পুরোই কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিলো। আমরা যে আমেরিকান সরকারের বা তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন কর্মকা- সম্পর্কে বা তাদের অপকর্মগুলো সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি জানি, তার একটা প্রধান কারণ কিন্তু এই ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্টগুলো। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এই সুযোগ নেই, ফলে তাদের অপকর্মগুলোও প্রকাশিত হয় না। যতো ট্রু এসপিওনাজ স্টোরি আছে, তার একটা বড় অংশই পাবলিক হয়েছে এই ডিক্লাসিফিকেশন প্রসেসের কারণে এবং স্বাভাবিকভাবেই আমার স্পাই স্টোরিজ বইয়েও কয়েকটা কাহিনি আছে, যেগুলোর তথ্য আগে ক্লাসিফাইড ছিলো, পরে গত কয়েক বছরের মধ্যে ডিক্লাসিফাই করা হয়েছে। ফেসবুক থেকে