রায়হান আলী, উল্লাপাড়া প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পূর্ণখনন করা হচ্ছে উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিল সূর্য নদী।
উল্লাপাড়ার গুচ্ছগ্রাম হেলিপ্যাডের পাশে করতোয়া নদী থেকে কয়ড়া ইউনিয়নের রতনদিয়ার ত্রিমহিনী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি নতুন করে খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কালের বির্বতনে নদীটি পলি পড়ে ভরা হয়ে যায়।
ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে বছরের অধিকাংশ সময় পানি শূণ্য থাকতো। নদীটি পূর্ণখনন হওয়ার ফলে উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।
স্থানীয়রা জানান, উল্লাপাড়া পৌর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত গভীর এই বিল সূর্য নদীটি এক সময় সচল ছিল। পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত এটি দেশের অন্যতম পাট বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। এই পাট বন্দর থেকে নদী পথে হাজার হাজার মন পাট নরসিংদী, খুলনা, চাঁদপুর, বাঘাবাড়ি, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো।
পাট ব্যবসায়ীরা কম খরচে পাট পরিবহনের জন্য তখন এই নদীটি ব্যবহার করত। আর সেই সময়ে পাট ব্যবসায়ীদের কাছে এই নদীর গুরুত্ব ছিল অত্যধিক। কালের বির্বতনে নদীটি পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে প্রায় ২৮ বছর ধরে এই নদীতে বষার্ মৌসুমে মাত্র ৩/৪ মাস পানি থাকে। অবশিষ্ট সময় নদীটি থাকে পুরো পানি শূণ্য। ফলে এখানকার পাট ব্যবসায়ীদের সড়ক পথে অনেক বেশি অর্থের বিনিময়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও ক্রয়কৃত পাট বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো।
এছাড়া এই নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার চাষীরা একসময় তাদের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে পারতো। কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আর এ কারণে এ অঞ্চলের মানুষ নদীটি পূর্ণখননের জন্য সরকারের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নদীটি পূর্ণখনন হলে আবারও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর লোকজন সারাবছর প্রাকৃতিক পানি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে পারবে একই সঙ্গে উল্লাপাড়া পাটবন্দরের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্থানে নৌকাযোগে পাট পাঠানোর সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মোঃ মিল্টন হোসেন জানান, বিল সূর্য নদীটি পূর্ণখননের জন্য ঢাকার তাজ ট্রেড লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। এই নদীটি পূর্ণখননের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আজমল হক জানান, বিল সূর্য নদীটি পূর্ণখনন কাজ শেষ হলে সারাবছর এই নদীতে পানি থাকবে।
ফলে নদীর দুইপাড়ে কৃষকদেরকে গভীর, অগভীর নলকূপ পরিচালনা করে আর বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে না। কৃষকরা কম খরচে লো লিফট্ পাম্প (এলএলপি) দিয়ে পানি সেচের মাধ্যমে খুব সহজে চাষাবাদ করতে পারবেন। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার নদীর দুইপাড়ের অন্ততঃ ৬ হাজার হেক্টর জমি সাশ্রয়ে চাষাবাদের সুযোগ পাবে কৃষকেরা। সম্পাদনা : আলআমিন