শিরোনাম
◈ মুগদায় ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় কিশোর নিহত ◈ বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া মে মাসে, নজর রাখবে ভারত ◈ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু: চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, যান চলাচল শুরু ◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভারত, চীন বা রাশিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত নয়: মার্কিন কর্মকর্তা ◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৫:১১ সকাল
আপডেট : ২৪ জানুয়ারী, ২০২০, ০৫:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফেসবুকে ‘আর্তনাদ’ প্রবাসী বেলালের

ডেস্ক রিপোর্ট  : মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমিকবান্ধব দেশ ওমান। দেশটিতে বসবাসরত প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় ওমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীও তুলনামুলক বেশি। দেশটিতে ছোটোখাটো ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের অবস্থান বেশ প্রশংসনীয়। এর ভেতর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কফি-শপ, রেস্টুরেন্ট, টুপি, রুমাল, কসমেটিক্স, গার্মেন্টস, ফার্নিচার ও এগ্রিকালচার।

তবে ওমানে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশিদের মাধ্যমেই। সাধারণত দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় ভিসা নিয়ে এসে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। তবে ওমানে আজ যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী- এক সময় তারা দেশটিতে শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন। নিজেদের প্রচেষ্টা ও যোগ্যতা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে সফল হয়েছেন।

সাধারণত ওমানে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে দেশটির আইন অনুযায়ী একজন ওমানিকে অবশ্যই অংশীদার হিসেবে রাখতে হয়। তার কাছে ইনভেস্টর ভিসাও থাকতে হবে। দেশটিতে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে নিজেকে অবশ্যই আগে একজন বিনিয়োগকারীর ভিসা লাগাতে হবে।

যদিও বিনিয়োগকারী ভিসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ওই দেশের একজন ওমানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। বিষয়টি অনেকের জন্য কাল হয়েও দাঁড়ায়।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বেলালের বেলায়। সবকিছু হারিয়ে গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুকে ‘আর্তনাদ’ শিরোনামে একটি পোস্ট করেছেন বেলাল।

পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবুহু তলে ধরা হলো-

‘আর্তনাদ’

‘৩০ হাজার রিয়ালের (৬২লাখ টাকা) দোকান, সকালে অনেক টাকার বাজার করে ক্যাশে এসে বসার সাথে সাথে স্পন্সরের ফোন এলো দোকানের চাবি দোকান ক্রয়োইচ্ছুক একজন ওমানি আসবে উনাকে বুজিয়ে দিতে। সকালের বিক্রিত ক্যাশটাও যেন আমি না নেই।

আরেকটি দোকান নেবো বলে অতিরিক্ত কিছু মালপত্র ছিল। নির্দেশ এল দোকান থেকে কোনো কিছুই নিতে পারবো না। পরে আমাকে দোকানের মূল্য বাবদ ৯ হাজার (২০ লাখ) দেওয়া হবে বলা হলেও আজ কাল করে ১ বছরেও দিল না।

এভাবে ৪টা দোকান গেল (২টা ওমানি, ২টা খোজা স্পন্সর) কনস্ট্রাকশানে ৪টা বিল্ডিংয়ের ফাইনাল বিল ৮০ হাজার রিয়াল ওমানি দিল না (বেলুচি স্পন্সর)। সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার মার খেয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারলাম না। এর মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কেঁচোর গর্তে যা ছিল তা নিতে গিয়ে দেখি সাপের গর্ত, ছোবলের ভয়ে হাত বাড়ালাম না! হার্ট ভালো ছিল বিধায় বেঁচে গেলাম।

১ বছর অনেক দুঃখ কষ্ট বুকে নিয়ে, অনেক বেলা না খেয়েও দিন কাটিয়েছি। ১১টা রিয়াল পকেটে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়েছিলাম। শেষ সম্বল ছিল ১টা ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন আর গাড়ী। সেদুটো বিক্রি করে ওমরাহ হজ্ব করে এক বুক জ্বালা নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে চিরতরে দেশে চলে এলাম।

এখন স্রোতহীন নদীর মতো, পথ হারা পথিক এর মতো। টেনশনের মধ্যে থাকলেও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ওমানে কারো মনে যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামান্যতমও দুঃখ কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ক্ষমা করে দেবেন সবাই, ইচ্ছা না থাকলেও আবার ওমানে ফিরে আসবো বলে কাউকেই বলে আসি নাই তার জন্যও ক্ষমা করবেন সবাই। আমাকে ভুল না বোঝার অনুরোধ রইলো। আসমান সে ঘিরা খাজুর পে আটকা। আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।’

এমন অনেক বেলালই সর্বহারা হয়েছেন ওমানের কিছু অসাধু নাগরিক দ্বারা। মাস্কাটের ইদ্রিস জনি নামে আরেক ভুক্তভোগী বেলালের সেই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমার কথা মনে আছে হয়তো। ৬ বছর আগে বাংলাদেশ সমপরিমাণ এক কোটি বিশ লাখ টাকার ক্ষতি হয় একই ভাবে। ভাগ্যিস আমার চাকরি ছিল তা না হলে আমার কি হতো চিন্তা করা যায়? এমন অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে, যাদের তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠানকে রাতারাতি নিয়ে নিচ্ছেন ওমানিরা। এইসব বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর ভিসা ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে না থাকায় আইনগত কোনো পদক্ষেপ ও নেওয়া সম্ভব হয় না। তাইতো সবকিছু হারিয়ে বেলালের মতো চুপিসারে দেশে চলে আসতে হয়।’

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ওমানের বৈধ ব্যবসায়ী অথবা ইনভেস্টর হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এমন বাংলাদেশি আছেন ১৫০ থেকে ২০০ জন। আর ওমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আছেন ছোট বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০০০ প্রবাসী। যাদের মধ্যে আবার অনেকেই বৃহৎ পরিসরে এগ্রিকালচার প্রোজেক্টও করেছেন।

তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওমানের আইন অনুযায়ী তারা সবাই ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যেকোনো সময় বেলালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তাদেরও। তাদের অংশীদাররা যদি চায়, তবে বেলালের মতো সর্বহারা হয়ে দেশে ফিরে আসতে হবে অনেককেই।

উল্লেখ্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘোষিত এ বছরের ৪২ জন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘সিআইপি’র মধ্যে ১২ জনই ওমান প্রবাসী। গত ৩ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দুই ক্যাটাগরিতে ৪২ জন প্রবাসীকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘সিআইপি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছর বিশ্বের সর্বাধিক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) ওমান প্রবাসী ব্যবসায়ী।

উৎসঃ আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়