সওগাত আলী সাগর : ১. বাঙালি পাড়া হিসেবে খ্যাত ডেনফোর্থেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ। ঠিক কে যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মনে করতে পারছি না। ‘তিনি চাঁটগাইয়া’ এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কেউ একজন। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেই হিসেবে অনেকেই আমাকে চাটগাইয়াই ভাবেন। ভদ্রলোক কথা শুরু করলেন চাটগাইয়া বাংলায়। দুয়েক মিনিট না যেতেই রাস্তার ওল্টা দিককার ফিটনেস ক্লাবটা দেখিয়ে জানতে চাইলেন এর মালিক কে জানেন? পর মুহূর্তেই বললেন, আমি এই বিল্ডিংটা কিনবো। আমি হতবিহ্বলের মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকি। এই বিশাল বিল্ডিংটা তিনি কিনতে চান। অথচ তিনি বলছিলেন, তিনি ক’দিন হয় মাত্র কানাডায় এসেছেন। কীভাবে সম্ভব। কয়েকদিনের মধ্যেই জানা হয়ে যায়, চট্টগ্রামের কোনো ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা মেরে তিনি কানাডায়। ব্যাংকের মামলায় তার নামে ওয়ারেন্ট হয়েছে এমন কথাও শোনা যায়।
টরন্টোয় চলতে ফিরতে যা দেখেন সব কিছুই কিনে ফেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। ২. ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে আসা এই ভদ্রলোক কানাডায় পা দিয়েই বন্ধু শুভাকাক্সক্ষীদের ‘যোগ্যতাকেই’ চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। ‘এতো বছর কানাডায় থেকে আপনারা কি করেছেন’? তার এই প্রশ্নে বন্ধুরা যেন অসহায় হয়ে পড়ে। বুকটাকে টান টান করে তিনি ঘোষণা দেনÑ কানাডার ব্যাংকারদের আমি ঘুষ খ্ওায়া শেখাবো। বাংলাদেশের ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হয় না। কানাডায়ও সেটা আমি চালু করবো। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দিতে হবে না। কিছুদিন পরই পত্রিকার শিরোনাম হন এই লোক। কানাডার ব্যাংক ব্যবস্থায় ঢুকতে পারেননি তিনি, বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে মেরে আনা টাকা সেই রিপোর্টের বিষয়বস্তু। ৩. দুটো ঘটনার উল্লেখ করলাম উদাহরণ হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা লুটপাট করে কানাডায় এসে তারা কানাডাকেও ‘বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলার’ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন।
নানা অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে আলোচিত অনেকেই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে শোনা যায়। ডেস্টিনির দুর্নীতির টাকার বড় অংশেই টরন্টোয় বলে গুঞ্জন আছে। দুদক কর্তৃক দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটি টিভি চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার পরিবারের সদস্যদের টরন্টোয় রেখে গেছেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের অভিযোগ করেছে দুদক। তিনি কি শুধু পরিবারের সদস্যদের রেখে গেছেন টরন্টোয়? ‘মুদ্রা টুদ্রা’ রেখে যাননি? ডিআইজি মিজানের ‘পরিবার’ এখন টরন্টোয় থাকে বলে আলোচনা আছে। এভাবে তালিকা করলে সেই তালিকাটা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। ৪. বাংলাদেশের মূলধারার পত্রিকায় কানাডায় টাকা পাচারকারীদের নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর কমিউনিটি যেন ফুঁসে উঠেছে।
দেশ রূপান্তরে গাজী বেলায়েত হোসেনের দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর পুরো কমিউনিটিতে যেন বিস্ফোরণ ঘটে। ডেস্টিনি থেকে শুরু করে সব লুটেরাদের প্রতিই ধিক্কার জানাতে শুরু করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ৫. কানাডা যেন বাংলাদেশের চোর-ডাকাতদের অভয়ারণ্য না হয়ে ওঠে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সে চেষ্টা করছেন। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘আমাদের একটি নিরাপদ গন্তব্য আছে’ বাংলাদেশের চোর-ডাকাতদের মনে যেন এই বোধ তৈরি না হয়। এ জন্য আমরা বাংলাদেশের বন্ধুদের সহায়তা চাই। কানাডায় টাকা পাচারকারীদের নিয়ে এ পর্যন্ত নব রিপোর্টিংই হয়েছে বাংলা ভাষায়। ইংরেজি পত্রিকায় নিউজ হলে সেগুলো কানাডা সরকারের নানা সংস্থার কাছে পৌঁছে দেয়া সহজ হয়। ঢাকার ইংরেজি পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করবো টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের সহায়তা করুন। ইংরেজি ভাষায়ও কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ফেসবুক থেকে