শেখ সেকেন্দার, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি : এশিয়ার শ্রম বিক্রি করার শহর মালয়েশিয়া। এই শহরকে বলা হয় স্বপ্নের শহর। স্বপ্নের সেই শহরে অনেকেই পেয়েছেন স্বপ্নের বাস্তবতা। আবার অনেকেই স্বপ্নের কাছে হার মেনে পরপারে চলে গেছেন। তেমনি একটি বছর ছিলো ২০১৯। পরিবার, দেশ ও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই মৃত্যুর মিছিলে শামিল হয়েছেন ৮শত ৪জন বাংলাদেশি।
যে সবার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে সুদূর প্রবাসে এসে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হলেন তার লাশটা নিতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সন্তান হয়েছে পিতাহারা, স্ত্রী হয়েছে স্বামী হারা আর পিতা-মাতা হয়েছে সন্তান হারা। একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা একটি পরিবারের প্রদীপ। আর সেই প্রদীপ নেভার সাথে সাথে পরিবারটি হয়েছে নিঃস্ব।
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী অবস্থান করছেন এছাড়াও অবৈধ রয়েছেন আরো তিন লাখের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। মালিকের শোষণ এবং শত কষ্টেও পরিবার-পরিজন এবং দেশকে স্বাবলম্বী করছে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
মালয়েশিয়ার ব্যাবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. রাহাদ উজ্জামান বলেন, প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় গড়ে মৃতের সংখ্যা দুই জনেরও বেশি। আর সেই লাশ বহনে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। টাকার অভাবে দীর্ঘদিন লাশ পড়ে থাকে হাসপাতালের মর্গে। মুহূষ রোগীদের পাঠাতে গেলে খরচ হয় তিন লাখের বেশি। জীবন বাজি রেখে যারা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তাদের মৃতদেহটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনা পয়সায় নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, আমরা বহু বাংলাদেশির মৃতদেহ অনেকের সহযোগিতা কামনা করে অর্থ গুছিয়ে তারপরে দেশে প্রেরণ করি, যা সত্যি বেদনাদায়ক।
মালেশিয়াতে লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রতিদিন ছুটে চলছে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়া ছিলো রেমিটেন্স প্রেরণে শীর্ষে। কিন্তু সেই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের লাশ পরিবহনে বিমান বাংলাদেশকে দিতে হাজার হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ায় নিহত বাংলাদেশিদের মরাদেহ পাঠাতে কেমন খরচ হয় জানতে কথা হয় মালয়েশিয়ার
এমতবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের নিকট আবেদন যত দ্রুত সম্ভব সকল প্রবাসীর জন্য মেডিকেল ইনসুরেন্স বাধ্যতামূলক করা এবং প্রবাসীদের যে কোন প্রয়োজনে কোন প্রকার কালক্ষেপণ ছাড়া ঐ কোম্পানি তাদেরকে দেশে নেয়ার বা সকল খরচ বহন করিতে বাধ্য থাকবে। তাহলে প্রবাসীরা সরকারের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবে বলে আশা করি। অথবা মালয়েশিয়া সরকার বা অন্যান্য সরকারের সহিত আলোচনা সাপেক্ষে বিশ্বের যে সকল দেশ থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স গ্রহণ করা হয় সে সকল দেশে একটি হাসপাতাল স্থাপন করা যাদের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগী এবং লাশ গুলো পাঠানোর ব্যাবস্থা করা যায় তাহলে অনেকাংশে প্রবাসীদের দূর্দশা লাঘব করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। সম্পাদনা : জহুরুল হক