রফিক আহমেদ : শেখ হাসিনার ক্ষোভের কথা শুনে সংগঠনের অভিযোগকারী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী যুবলীগ। তবে কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও হতাশা আর আতঙ্কে রয়েছেন তৃণমূলের ‘ইউনিট’ যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের দিবস ভিত্তিক কিংবা সভা-সমাবেশে এরপর থেকে কর্মীদের উপস্থিতিতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে। এতে বিএনপি- জামায়াত, সরকারবিরোধীরা এবং দলের বিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ-সন্ধ্যানীরা বড় ধরনের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠতে পারে।
চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সরে যেতে হয়েছে। গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগ নেতাদের নিয়েও কথা বলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি ট্রাইব্যুনাল আছে। এখানে কেউ কোনো অপরাধে জড়িত থাকলে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। অতি শিগগিরই আমরা অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি করব। তারপরে বিচারের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের সময় শেখ হাসিনা তাদের ‘শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ’ বলে মন্তব্য করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, গত শনিবার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, যুবলীগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কতিপয় ব্যক্তি (জামায়াত-শিবির) দলকে দুর্বল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে এবার সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সংগঠন আওয়ামী যুবলীগকে দুর্বল করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে সফল হবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বদায় যুবলীগ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে, যোগ করেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তিনি আরো বলেন, গত শনিবারের অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে আমরা এই তদন্ত কমিটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
এদিকে অভিযোগ উঠার পর গত সোমবার এক আবেগগণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান। ওই স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার শক্তিশালী সংগঠন বলতে আছে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণ। তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এই সংগঠনের সকল দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন যুবলীগের ডাইনামিক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। দুঃসময়ে ছাত্ররাজনীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যুবলীগ করছি। এতো শক্তিশালী সংগঠন রাজধানী ঢাকায় গত ২৫ বছরে দেখিনি। কিন্তু এই সংগঠনকে ধ্বংস করার জন্য যত ষড়যন্ত্র, গভীর ষড়যন্ত্র। মূলত প্রিয়নেত্রীর হাতকে দুর্বল করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র। সম্রাট ভাইতো প্রিয়নেত্রীর পরীক্ষিত সৈনিক, রাজপথের পরীক্ষিত কর্মী। আমি দীর্ঘদিন কাছে থেকে দেখিছি এতো বড় মনের মানুষ, কর্মীবান্ধব নেতা এবং এতো ভাল মানের কর্মী প্রিয়নেত্রীর ঢাকার রাজপথে খুবই প্রয়োজন। আর কত পরীক্ষা দিতে হবে তাকে জানি না। তার যখনই কিছু পাওয়ার সময় আসে, তখনই শুরু হয় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, গভীর ষড়যন্ত্র। কাকে খুশি করার জন্য প্রিয়নেত্রীর দোহাই দিয়ে এসব হচ্ছে। কি ষড়যন্ত্র শুরু হলো, ভাবার সময় এসেছে। আমাদের নেত্রী জাতির পিতার কন্যা, অত্যন্ত বিচক্ষণ নেত্রী। তিনি অবশ্যই বিষয়গুলো দেখবেন। কারণ তিনি গত ৩৬ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে বহু প্রতিকূল অবস্থা থেকে সংগঠনকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটদের মতো কর্মী রাজপথে বার বার জন্ম নেয় না। যুগে যুগে একটাই জন্মায়। একইভাবে গত দুইদিন ধরে শত শত নেতাকর্মী আবেগগণ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
এতে মুহূর্তের মধ্যে শত শত নেতাকর্মী লাইক ও কমেন্টস করেন। এছাড়াও যুবলীগ নিয়ে অভিযোগ উঠার পর ডেমরা ইউনিয়ন (বর্তমানে ৭০ নং ওয়ার্ড) যুবলীগের সাংগঠনিক মো. রজমান খান, ৬৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি নীরু আমিন নুরুল, ৬৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মানিউর রহমান মৃর্ধা শিশু, সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন, ৬৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. রাসেল, সাধারণ সম্পাদক-এস এম সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন রাজীব, ৪১নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জিমি এবং ৯৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো.শরিফুল ইসলাম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আশিকুল আলম রিমনসহ ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সকল ওয়ার্ড- ইউনিট ও থানার নেতারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা দাবি করেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাজপথ, মাঠে-ময়দানেও (অলিগলিতে) বিএনপি- জামায়াত আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের ফায়দা লুটতে পারেনি। তাই পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বিতর্কিত করতে এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মিশনে নেমেছে। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে একের পর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাহসী ও রাজপথ কাঁপানো নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। এদের প্রতিহত করা হবে বলেও জানান যুবলীগের তৃণমূলের নেতারা।
আপনার মতামত লিখুন :