শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আন্দোলিত জয়ের প্রেরণায় সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ

মোস্তফা ইকবাল : ধর্ম ও সংস্কৃতি দুটোই মানুষকে অপরাধ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। এজন্যই ধর্ম ও সংস্কৃতি সামাজিকভাবে এর চর্চা আবশ্যকীয় মনে করা যায়। একসময় গ্রাম মহল্লায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা দেখলেও এখন তা ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন মাদক, সন্ত্রাস, অন্যায়, অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। একসময়ে গ্রামের মোড়লিপনার রামরাজত্ব থাকলেও এখন তা বহুগুণে বেড়ে টাউট-বাটপার দৌরাত্ম্যে গ্রাম-বাংলা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। অবশ্য ধর্মীয় চিন্তায় কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে, ধর্মীয় বিশ্বাসের ফাঁকফোকরে নিজেকে শুদ্ধ করা যায়, এজন্য তারা অনেক সময় বিচ্যুত হতে দেখা গেলেও সংস্কৃতিবানরা তা নয়। সংস্কৃতি মানে মার্জিত চিন্তাধারা, যেই চেতনার সৌন্দর্য সবাইকে আকর্ষিত করে, অনুকরণীয় করে এবং আত্মশুদ্ধির সফল মাধ্যমও বলা যায়। সাহিত্য, সংগীত, থিয়েটার, শিল্প হচ্ছে সংস্কৃতির প্রমিত স্টেশন, সেসব স্টেশনের কোনো যাত্রী সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয় না। তারা নিজের ভেতর একধরনের মানবিক বিশ্ব সৃষ্টি করে থাকেন। সংস্কৃতি হচ্ছে পরিচ্ছন্ন জীবনের জ্যামিতিক পরিমাপে নিজকে পরিশুদ্ধ রাখার চর্চা, যারা এ চর্চায় বিনীত, তারা রাজনীতি ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতিতে সেই চর্চা ক্ষীণ।

কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের বর্তমান রাজনীতিতে কোনো কদর থাকার প্রমাণ মেলে না। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব প্রস্তুতির সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিলো রাজনীতির মাঠে জনগণকে উজ্জীবিত করার এক মহান বৈঠা, যা তরী সচ্ছল রাখতে সহয়তা করেছে। এখন রাজনীতিতে কেন জানি সেসব চর্চা চোখে পড়ে না। বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আন্দোলিত জয়ের প্রেরণায় সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলদারিত্ব মার্শাল-ল মুভমেন্ট বা স্বৈরতন্ত্রের বিপরীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ থিয়েটার, সংগীত, চিত্রকলাসহ নানা মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকে। ইদানীং আমাদের দেশে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হবার সংস্কৃতি বিকাশের সরকারি উদ্যোগ খুব একটা চোখে পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মননশীল মানুষ, বেসরকারি সংগঠন, সংস্থা বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা আরও বেশি বেগবান। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য সরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে পিছিয়ে রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায় মন্ত্রী, এমপি, আমলা অথবা টাকাওয়ালাদের মনোরঞ্জনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা।

যাতে করে শিক্ষণীয় সংস্কৃতির পরিবর্তে প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথিকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র অতিথিদের খুশি করার অনুষ্ঠানকে কি করে বলবো সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র? আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই আমাদের বরণ্য সংস্কৃতি ব্যক্তিত্বরা বেশিরভাগ উঠে এসেছেন গণমানুষ থেকে। বিশ্বসাহিত্য সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখযোগ্য। আমাদের লোকসংস্কৃতি, বিশ্ব সংস্কৃতির বুকে বিস্ময়কর জলছাপ এঁকে দিয়েছেন লালন ফকির। নজরুলের দ্রোহধ্বনি বিশ্বকে নাড়া দেয়। তবুও আমরা আমাদের সংস্কৃতির ঠিকানা যদি ঠিক রাখতে না পারি, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি বা থাকতে পারে? আমাদের জাতিগত বিড়ম্বনার শেষ নেই, আমরা আজীবন শোষিত জাতিগতভাবে সংগ্রামী। তার জন্য আমাদের সংস্কৃতির একটা অভিন্ন চরিত্র ফোটে ওঠে, তা হচ্ছে আবেগ, উদ্বেগ, আন্দোলিত পরিচয়। সেটি কালজয়ী, সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় দেখা যায় আমাদের শিল্পীরা সংক্ষুব্ধ তবে তারা সৃজনশীল। আমাদের সৃষ্টিশীল সংস্কৃতির গুণগত ব্যাকরণ অপরিসীম, যা বিশ্ব সংস্কৃতির সব জাতিগত সংস্কৃতিকে নাড়া দেয়। নিশ্চয় পরাক্রমশালী এ সৃষ্টির সৌরভ সব মানবের। একটি জাতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি হচ্ছে আত্মপরিচয়ের গৌরবান্বিত সম্পদ। সে সম্পদ যদি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জাতিগত পরিচয়ের সংকীর্ণতা প্রকাশ পাবে। এজন্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে তাদের সংস্কৃতির পরিচয়, স্ব স্ব জাতির ভাবধারা, জীবনবোধ, গুণগত প্রকাশ না থাকলে সেটিকে উড়নচ-ী ছাড়া কি বলা যায়? আমাদের দেশে উড়নচ-ী মানুষেরও অভাব নেই। যারা সংস্কৃতির পরিম-লের বাইরে থেকে ভেতরের রূপ না বুঝে অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত হয়। সেসব লোকদের দৌরাত্ম্যে সংস্কৃতির গুরুত্ব এখন প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে গৌরবান্বিত ছাত্র সংগঠনগুলো, যাদের ইতিহাস বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামের চূড়ান্ত পলাশ, আমাদের পরাণে গেঁথে রাখার পরম শ্রদ্ধায় পুষ্পিত। তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় গুণগত বিষয়ে আমরা বিস্মিত! একইধারায় রাজনৈতিক সংগঠনগুলো উল্লাসিত দেখে আমরা কূল পাই না। আমাদের রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভেতর এখন যেই অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি এর জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে না আসলে আমাদের ভবিষ্যতের জাতিগত দিকসমূহের ঐক্য এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ নয়। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়