শিরোনাম
◈ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ ◈ যেদিন রাস্তায় নামবো, সেদিন বন্দুকও কিছু করতে পারবে না: কাদের সিদ্দিকী ◈ ডাকসু নির্বাচন: আগমুহূর্তে শিক্ষার্থীদের যে বার্তা দিলেন উপাচার্য ◈ বাগেরহাটে ৪ আসন পুনর্বহালের দাবিতে সর্বদলীয় হরতাল-অবরোধ, মোংলা বন্দরে স্থবিরতা ◈ চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব, পায়রা বন্দর চালু হবে আগামী জুলাইয়ে ◈ কুমিল্লায় মা-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা, সিসিটিভিতে ধরা রহস্যময় ব্যক্তি ◈ জুলাই অভ্যুত্থান: মামলার কার্যক্রম গতিশীল করতে সাত সদস্যের কমিটি ◈ পুলিশের ৫৯ কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ◈ ভারতে যাচ্ছে ১২০০ টন ইলিশ, রপ্তানির অনুমতি দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ◈ ‘চোরের মায়ের বড় গলার’ দিন শেষ, কাকে বললেন সারজিস

প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ০৪:২৯ সকাল
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ০৪:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কমছে বাঘের সংখ্যা, সরকারি উদ্যোগ থাকলেও থেমে নেই বাঘ নিধন

দেবদুলাল মুন্না: আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিন বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই প্রকাশিত ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জরিপ অনুয়ায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬টিতে। অথচ ২০০৪ সালে বন বিভাগ এনএনডিপির সহায়তায় প্রথমবারের মতো বাঘের পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল ৪৪০টি। দুবছর পর ২০০৬ সালে ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করে এর সংখ্যা নির্ধারণ করে ২০০টি।তবে দিন দিন বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অঞ্চলে কমছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের বাঘশুমারিতে ১০৬টি বাঘ থাকার কথা বলা হয়েছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টি।

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন একটিভিটি (বাঘ) মোট চারটি ধাপে তিনটি ব্লকে ১ হাজার ৬ শত ৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ক্যামেরা বসিয়ে ২ শত ৪৯ দিন ধরে পরিচালিত জরিপে ৬৩টি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ (১২-১৪ মাস বয়সী) এবং ৫টি বাঘের বাচ্চার (০-১২ মাস বয়সী) ২৪৬৬টি ছবি পেয়েছে। বাঘ গণনার কার্যক্রম (দ্বিতীয় পর্যায়) শেষে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ। এই জরিপের ফল চলতিবছরের গত মে মাসে রাজধানীর বন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।এদিকে রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত প্রথম বাঘ সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অথচ বাস্তব অবস্থা ভালো নয়। এই অবস্থার মধ্যে আজ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোসহ সরকারী ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন সভা-সমাবেশ, র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে।

বাঘ হত্যা ও পাচার নিয়ে গবেষণা করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। ২০১৬ সালের জুনে তারা বাঘ হত্যা ও চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঘ হত্যায় মদদ দেওয়া ও চোরাচালানে জড়িত।এদিকে 'বাঘ বাঁচলে বন বাঁচবে' এই ভাবনাকে সামনে রেখে বাঘ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তৈরি করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান’। প্ল্যান অনুযায়ী গতবছর থেকে থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের দুটি ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ফসলের কীটনাশক দিয়ে সুন্দরবনের বাঘ মারা হচ্ছে। বাঘ মারতে ফুরাডন নামের কীটনাশক ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরিণ মেরে তাতে ফুরাডন মাখিয়ে বনের মধ্যে টোপ হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। ওই বিষ মাখানো হরিণ খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা যায় বাঘ।’

এদিকে নানা উদ্যোগ সত্তে¡ও কোনভাবেই বাঘ নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না বাংলাদেশে। চোরা শিকারিদের কবল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না সুন্দরবনের প্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে।আবার নির্বিচারে হরিণ শিকারের কারণে বনে দেখা দিয়েছে বাঘের খাদ্য সংকট। ফলে মাঝে মধ্যেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে মারা পড়ছে বাঘ। গত ১৭ বছরে অন্তত ৩২টি বাঘকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৩ জানুযারি বাগেরহাটে একটি বাঘ হত্যা করা হয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘ না বাঁচলে শুধু বন নয়, ওই এলাকার মানুষও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কারণ বাঘ কমলে বন ধ্বংসের প্রবণতাও বাড়বে। সুন্দরবন না থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিলীন হয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।

বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮ বছরে ভারত, নেপাল ও রাশিয়ায় বাঘের সংখ্যা বাড়লেও বাংলাদেশে তা কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের আয়তন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে হরিণ ও শূকরের মতো বাঘের খাবার নিশ্চিত করা গেলে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা অসম্ভব নয়। শিকারিদের কবলে পড়ে বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে কম্বোডিয়া থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চীন ও ভিয়েতনামে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি বাঘ রয়েছে। বাঘ হত্যা ও চোরাচালান বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশেও বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়