নূর মাজিদ : ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ২০২০ সালের নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে দেশটির আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন। যার অংশ হিসেবে তিনি নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে অতি ধনীদের স¤পদে অতিরিক্ত কর কার্যকরের পরিকল্পনা করেছেন। ওয়ারেন ও তার সমর্থকদের দাবী, এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ শিক্ষাঋণ পরিশোধ, পরিবেশ সম্মত অবকাঠামো নির্মাণ, দরিদ্র ভাতা সহ প্রভৃতি সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে খোদ ডেমোক্র্যাট শিবিরেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। যার গোঁড়ায় আছেন দলটির সমর্থক অর্থনীতিবিদ গোষ্ঠী এবং নতুন বামপন্থী অর্থনীতির সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা। সূত্র : সিএনবিসি।
ওয়ারেন স¤পদ করারোপের মাধ্যমে বার্ষিক ২০ হাজার কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা করেছেন। যা নিয়ে একমত নন, দলটির সু-প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে থাকা প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ লরেন্স সামার। গত এপ্রিলে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমসে লেখা এক উপ-সম্পাদকীয় কলামে নিজের অভিমত বেশ খোলাখুলিভাবেই তুলে ধরেন। এই সময় তিনি ওয়ারেন এবং তার সমর্থক বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করে বলেন, তারা সম্পদ করের মাধ্যমে প্রকৃত সম্ভাবনার চাইতে বেশি অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। এই নিয়ে তারা দারুণ আশাবাদী হলেও, এই পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়।
আরেক ডেমোক্র্যাট অর্থনীতিবিদ এবং আইনজীবী নাতাশা সারিনের সঙ্গে যৌথভাবে এই উপ-সম্পাদকীয় লেখেন তিনি। সেখানে সারিন পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, নতুন করারোপের মাধ্যমে রাজস্ব আয়বৃদ্ধি করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ ধনীরা কল্যাণ ট্রাস্ট, নিজেদের সম্পদের মূল্য কম দেখানো ইত্যাদি ধরণের ফাঁক বের করে করফাঁকি দেয়া অব্যাহত রাখবেন। সারিন মনে করেন, নতুন করের আওতায় বার্ষিক আড়াই থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবেনা।
তবে এসব বিরোধিতা মানতে নারাজ ওয়ারেনের করনীতি প্রণয়নে জড়িত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির দুই বামপন্থী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইমানুয়েল সায়েজ এবং গ্যাব্রিয়েল জুকম্যান। তারা সামার এবং সারিন জুটির অবস্থানের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। সায়েজ এবং জুকম্যানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাদের সহকর্মী ফরাসি অধ্যাপক থমাস পিকেট্টি। এই ফরাসি ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনীদের আয় এবং তার সঙ্গে সাধারণ মার্কিন জনগণের আয় বৈষম্য নিয়ে ইতিপূর্বে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বইও লিখেছেন। ক্যাপিটাল ইন টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি নামক ওই বইটি ২০১৪ সালে বিশ্বে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেয়।
এই ত্রয়ী সামারের কলামের বিপরীতে আরেকটি উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন। যা গত জুনে একই দৈনিক প্রকাশ করে। সায়েজ এবং জুকম্যান তাদের কলামে দাবী করেছেন, সামারস ও সারিন জুটি বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন। কারণ তাদের মতে ধনীরা তাদের মোট স¤পদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রাষ্ট্রের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে সমর্থ হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে যা একেবারেই সম্ভব নয়। দুজন প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদ এত বড় ভুল করতে পারেন না বরং তারা নতুন কর আইন প্রণয়নে বাঁধা ও বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছেন, দাবী করেন তারা।
এসময়য় তারা আরো বলেন, শুধুমাত্র শীর্ষ ১৫ মার্কিন ধনীর কাছ থেকেই বার্ষিক ২ হাজার ৮শ কোটি ডলার আদায় করা সম্ভব। এবং ওয়ারেনের কর পরিকল্পনা আইনে রূপ নিলে শীর্ষ ৪শ মার্কিন ধনী বার্ষিক ৮ হাজার ২শ কোটি ডলার কর দেবেন।