শাহীন খন্দকার : শুক্রবার দুপুর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশ ভারী বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে। এরকমভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে পানি যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়। এর ফলে দ্রুতগতিতে দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, আজকের মধ্যেই যমুনা নদীর জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ১৬৫, হাতিয়ায় ১৩৫, সীতাকুণ্ড১২৯, টাঙ্গাইলে ১২২, কুতুবদিয়ায় ১১১, সনদ্বীপে ১০১ এবং চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অবনতির দিকে। আমাদের অর্থনীতির সারা দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই বেড়েছে সুরমা, ধরলা ও তিস্তার পানি। পানিবন্দি হয়ে আছে অনেক গ্রামের মানুষ। কমপক্ষে হাজারো পরিবার ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়শিবিরে।
আমাদের অর্থনীতির লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাট জেলার প্রায় সবকটি নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে ধরলা’র পানিও। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী ১৯টি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা কুটিরপাড়ে বাঁধ ভেঙ্গে তিস্তার পানিতে ভেসেছে লোকালয়। ডুবেছে ঘর-বাড়ী ও আবাদি জমি। গবাদি পশুসহ অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে চরম অমানবিক পরিস্থিতে পড়েছেন দুর্গতরা।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, জেলার দীঘিনালায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আভাস নেই। বুধবার থেকে পানিবন্দি ২৫ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ। ১২টি আশ্রয় শিবিরে উঠেছে তিন শতাধিক পরিবার। এখনো বিচ্ছিন্ন দীঘিনালার সাথে রাঙামাটির লংগদুর সড়ক যোগাযোগ।
বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। সড়কের বিভিন্ন স্পট তলিয়ে বুধবার থেকে বিচ্ছিন্ন সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ। পাহাড় ধসে সাত উপজেলার অভ্যন্তরীন রাস্তাগুলোও বন্ধ রয়েছে।
একই অবস্থা সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার। প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা যায়, গত পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। আকস্মিক এই বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় তিনশ’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৬টি পয়েন্ট দিয়ে পাড় উপচানো পানি সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলো।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী চরের নিম্নাঞ্চল। দ্রুত গতিতে পানি বাড়ার পাশাপাশি তীব্র রূপ নিয়েছে নদ-নদীর ভাঙন। বন্যা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের দাবি জানিয়েছেন দুর্গতরা।
এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরি, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।