আমিন মুনশি : আমরা যেসব ইবাদত করি তা সাধারণত তিন ধরনের। প্রথমটি শারীরিক ইবাদত। যেমন- নামাজ, রোজা। এ ইবাদতে আর্থিক কোনো বিষয় নেই। শুধু শারীরিক পরিশ্রম রয়েছে। দ্বিতীয়টি আর্থিক ইবাদত। যেমন, জাকাত আদায় করা। এখানে শারীরিক কোনো পরিশ্রম নেই। শুধু অর্থ ব্যয় রয়েছে। তৃতীয়টি শারীরিক ও আর্থিক উভয়টি। অর্থাৎ এমন কিছু ইবাদত যাতে আর্থিক ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমও জড়িত। এর মধ্যে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে হজ। এতে একদিকে যেমন অর্থ ব্যয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম।
হজের বিধানগুলো সুন্নত তরিকা অনুযায়ী পালন করা এতটাই কঠিন যা দুর্বল মুসলমানের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর্থিক ও শারীরিক উভয় প্রকার ইবাদত হজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকায় অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় এটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভেরও এটি একটি কার্যকর মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা হজের আবশ্যকতা সম্পর্কে ঘোষণা করেন, মানুষের পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশে হজ করা ফরজ, যার পথের সামর্থ্য আছে।’(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭) এখানে সামর্থ্য বলতে আর্থিক ও শারীরিক উভয় প্রকারই বোঝানো হয়েছে।
ইসলামের এই ফরজ হুকুম পালন করার জন্য যারা রওনা হন তারা আল্লাহর মেহমান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আল্লাহর যাত্রী হলো তিন ব্যক্তি। হাজী, গাজী ও ওমরাহকারী।(নাসায়ী ও বায়হাকী শরিফ) এমনকি তারা যদি এ কাজ করার সংকল্প করে ঘর থেকে বের হবার পর ইন্তেকাল করে তবু সেই সওয়াব পেয়ে যাবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে যিনি হজ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশে বের হয়েছেন, অতঃপর তিনি পথের মধ্যে মারা গেছেন, তার জন্য হাজী, গাজী অথবা ওমরাহকারীর সওয়াব লেখা হবে। (মিশকাত শরিফ) আর যদি হজ করে ফিরে আসে তাহলে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যিনি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করেছেন এবং তাতে অশ্লীল কথা বলেননি বা অশ্লীল কোনো কাজ করেননি, তিনি যেদিন হজ থেকে(গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে) ফিরবেন সেদিনের মতো, যেদিন তাকে মা প্রসব করেছিলেন। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ) অর্থাৎ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার যেমন কোনো গোনাহ থাকে না, ঠিক তেমনিভাবে হজ সম্পন্নকারী ব্যক্তিরও কোনো গোনাহ থাকে না।