ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা হওয়া সত্ত্বেও একটি আলাদা রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করার লক্ষ্যে তৎপর হয়েছেন এলডিপির সভাপতি ড. অলি আহমদ। আর ওই মঞ্চে তিনি রাখতে চাইছেন শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও কল্যাণ পার্টিসহ কয়েকটি দলকে। তাদের নিয়ে নতুন নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সরব হতে চান অলি। কালের কণ্ঠ
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মতে, আগামী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অলি আহমদের দলের নতুন অবস্থান ব্যক্ত করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত, কল্যাণ পার্টি এবং জাগপাসহ কয়েকটি দলকে ওই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওই দলগুলোর নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে অলি আহমদের ওই তৎপরতাকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। দলটির অনেকের মতে, বিদেশি কোনো শক্তির ইঙ্গিতে তিনি ওই তৎপরতা শুরু করে থাকতে পারেন। তবে কৌশলগত কারণে এখনই অলি আহমদকে তাঁরা কিছু বলছেন না। তাঁর তৎপরতার দিকে নজর রাখছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় ২০ দলীয় জেটের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে অলির তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অলি আহমদ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে বক্তব্য রাখবেন। দেখা যাক, সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক রয়েছে।’
তবে অলি আহমদ বলেন, ‘আগামী ২৭ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হব। সেখানে নতুন রাজনৈতিক অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার আগের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা কি না, জানি না। তবে নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে এরই মধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁদের নিয়েই আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।’ অবশ্য ২০ দলীয় জোট ভাঙছে না বলেও দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক এই সদস্য।
অলি আহমদ সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থেকে দলের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না এবং তারেক রহমানও লন্ডন থেকে পারবেন না। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘হয় আপনারা কেউ দায়িত্ব নেন, না হলে আমার নেতৃত্বে আসেন।’
গত ২১ মে এক সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ জামায়াতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘জামায়াতের ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই।’ তিনি এও বলেন যে জামায়াতের কোনো দোষ নেই এবং ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের টিকে থাকার বাস্তবতা এখনো আছে।
জানা গেছে, অলি আহমদের এ তৎপরতায় জামায়াতের সমর্থন আছে এবং দলটি বৃহস্পতিবার অলির পাশে থাকবে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপড়েনের মধ্যে অলির সঙ্গে দলটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে বলে অনেকে মনে করছে।
তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন তাৎপর্য রয়েছে কি না, জানি না। তবে অলি আহমদের উদ্যোগের কথা শুনেছি।’ তিনি বলেন, ‘এলডিপির ওই তৎপরতায় ২০ দলীয় জোটের কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করি।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনের কথা আমি শুনেছি। এখনো জানি না। তবে সম্ভবত তিনি জানাবেন।’
২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তখনকার ২৪ জন মন্ত্রী ও এমপিকে নিয়ে বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অলি আহমদ। পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে এলডিপি গঠন করেছিলেন। যদিও বি চৌধুরী বেরিয়ে গিয়ে ২০০৭ সালে বিকল্পধারা গঠন করেন। এরপর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেন অলি আহমদ। তবে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিদের সংসদে যোগদানের ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ তৈরি হয়। এর পর থেকেই নতুন তৎপরতা শুরু করেন অলি আহমদ।
ডব্লিউএস/এসবি/এএস