তানজিনা তানিন : দুই দুর্নীতির মামলায় দণ্ড প্রাপ্ত হয়ে এক বছর তিন মাস (৪৭৭ দিন) ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সম্প্রতি তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দ্বিতীয় দফায় নেয়া হয়েছে। এবারের ঈদও কারা হেফাজতে বিএসএমএমইউ-তে কাটবে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ প্রতিদিন
সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। বেগম জিয়ার মুখে ঘা হয়েছে। এ কারণে নরম খাবার খেতে হচ্ছে। হাতের গিরায় গিরায় ব্যথা এখনো আছে। খাবার আগে এখন ডায়াবেটিস সাড়ে ১২। তাই তার ওষুধেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন করে থেরাপিও দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই তার ঈদুল ফিতর কাটবে।
সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলেছে, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ক্রমেই তার উন্নতি হচ্ছে।’ বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেজুয়ালি ইম্প্রুভিং। তার যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো ক্রনিক ডিজিজেস, এগুলো একটু সময় লাগে, খুব স্লো ইম্প্রুভ হয়। ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিসসহ অন্যান্য যে দুর্বলতা ছিলো এগুলো অনেক উন্নতি হচ্ছে।’
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সেগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। আর বাকি মামলাগুলো হরতাল অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছে খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এখন মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ, জিয়া চ্যারিটেবল ও ঢাকার মানহানির দুই মামলায় জামিন নিতে হবে।’
দলের আইনজীবী নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার জামিনে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। নেতাদের কেউ কেউ রমজানের পর পর বড় কর্মসূচি দেয়ার পক্ষে। আরেকপক্ষ বলছে, দল গুছিয়ে আন্দোলনে যেতে হবে।