এইচ এম জামাল: অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য নানা প্রলোভন দেখায় দালাল চক্র। এ ক্ষেত্রে লোকজনের আস্থা অর্জন করতে ইতালি পৌঁছানোর পর টাকা নেয়ার কথা বলেই বেশির ভাগ লোককে পাচার করা হয়। ইতালি যাওয়ার জন্য ৭-১০ লাখ টাকা নেয় পাচারকারীরা। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় জীবিত ফেরা ১৫ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলা ট্রিবিউন
৯ ও ১০ মে ভূমধ্যসাগরে পরপর দু’টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। দেশে ফেরা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন,ইতালি যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থাকতে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়নি তাদের। তাদের সঙ্গে দালালের চুক্তি ছিল লিবিয়া ও ইতালি পৌঁছানোর পর টাকা। দালালরা ইতালি যাওয়ার জন্য কারও কাছ থেকে ৭ লাখ, কারও কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। লিবিয়া পৌঁছানোর পর দালালের প্রতিনিধিরা দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে কয়েক ধাপে টাকা নেয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে দালাল পারভেজের হাত ধরে লিবিয়া যান সিলেটের সোহেল আহমেদ। দালাল পারভেজ নিজেও এক সময় লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন। চুক্তি ছিল সাড়ে ৮ লাখ টাকায় ইতালি নেয়া হবে সোহেলকে।
চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া যাওয়ার পর দুই কিস্তিতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা বাংলাদেশে দালাল পারভেজের প্রতিনিধিকে দেয় সোহেলের পরিবার। সোহেল বলেন, ‘লিবিয়া যাওয়ার পর আমিসহ কয়েকজনকে একটা গুদাম ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। ওখানে আমাদের সঙ্গে থাকা ডলার, টাকা, মোবাইল সব নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় পারভেজের কাছে। ইতালি যাওয়ার জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত পারভেজের তত্ত¡াবধানে ছিলাম। লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার পরিবার তিন লাখ টাকা দেয় দালালের লোকজনের কাছে। দুই তিন মাস আগে আমাদের জানানো হয় জাহাজে করে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। তাই বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তখন দেশে আমার পরিবার সাড়ে ৫ লাখ টাকা পারভেজের লোকজনের কাছে দেয়। আমাদের জাহাজে নেয়ার কথা বললেও নিয়ে গেছে প্লাস্টিকের নৌকায় করে।
লিবিয়া থেকে ফিরে আসা ১৫ জনের একজন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের বাসিন্দা সজীব। তার ভাই সুমন বলেন, ‘সজীব নিজেই দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। দালাল দেশে থাকতে কোনও টাকা নেয়নি। লিবিয়া পৌঁছানোর পরপর দালালের লোকজন ৪ লাখ। মাঝে মাঝে দেশে ফোন দিতো দালালের মাধ্যমে। সর্বশেষ আরও দুই লাখ টাকা দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আস্থা অর্জন করতে দালাল চক্র নানা কৌশল নিয়ে থাকে। আগে টাকা না নেয়াটাও তাদের একটি কৌশল। দেশে থাকতে টাকা দিতে হবে না, টাকার অঙ্কও বেশি না হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে। ইতালিতে আয় করা অনেজ সহজ-এমন অনেক গল্পও শোনায় পাচারকারীরা, যা সঠিক নয়।’ তিনি বলেন, যেখানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করছে, সেদেশের মানুষ কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যাবে, সে প্রশ্নও উঠছে। সরকারকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।