অনির্বাণ আরিফ : ভারতের জাতীয় নির্বাচনে মোদী জিতে যাবে এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। বাংলাদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারেক রহমানের মতো লোক জিতে যাবে। উপমহাদেশের যেখানেই সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হবে সেখানেই মোদী-তারেক-ইমরান খানের মতো ঘৃণাজীবীরা জিতে যাবেন। এবং সোনিয়া গান্ধী, শেখ হাসিনা (১৪ সালের পূর্বের শেখ হাসিনা), প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর মতো অপেক্ষাকৃত লিবারেল নেতৃত্ব পরাজিত হবে।
উপমহাদেশের ইতিহাস সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। উপমহাদেশের ইতিহাস ধর্মযুদ্ধের ইতিহাস। উপমহাদেশের ইতিহাস ঘৃণা আর বিভেদের ইতিহাস। এ উপমহাদেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বড় হওয়া ব্যক্তিও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মীয় বিভাজন এবং ঘৃণা লালন করে থাকে। এ বিভাজনটি ভিন্ন ধর্মের প্রতি। এ ঘৃণাটি ভিন্ন জাতির প্রতি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উপমহাদেশের হাওয়া বুঝে ইউটার্ন দিয়েছেন। চিরকালের লালিত লিবারেল পলিটিক্স ত্যাগ করে পপুলিজম তথা মৌলবাদের পথে হাঁটছেন। ভারতের সোনিয়া গান্ধী তা পারেননি। পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো তা পারেননি। সেজন্য তারা ক্ষমতায় নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা আছেন।
আমরা যতোই উদার গণতন্ত্রের কথা বলি, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, শান্তির কথা বলি এসব আদতে আত্মসুখ পেতে করি। নিজেদের জন্য করি। আমাদের গণতন্ত্র হলো সুযোগ পেলে নিজ দেশে মৌলবাদী দলকে একটি ভোট দেবো। স্যেকুলার দলকে কাফের বলে ফতোয়া দেবো। আর পাশের দেশের স্যেকুলার দলের জয়ের জন্য প্রাণভরে প্রার্থনা করবো। এ জাতীয় ডেমোক্রেটিক হিপোক্রেসিতে সারা উপমহাদেশের সমগ্র নাগরিক আচ্ছন্ন।
আজ মৌলবাদী মোদীর জয়ে এদেশের হিন্দুরা আনন্দিত! কিন্তু হিন্দুরা এদেশে স্যেকুলার দলকে চায়। আবার স্যেকুলার নেতৃত্বের সোনিয়া গান্ধী জয়ী হলে এদেশের মুসলিমরা অসম্ভব আনন্দ পেতো। কিন্তু এ মুসলিমরা নিজ দেশে (বাংলাদেশ) জামায়াত-হেফাজতকে চায়। উপমহাদেশের রাজনীতিতে উদারপন্থার জায়গা খুব দুর্বল হয়ে পড়ছে। পপুলিজমের নামে মৌলবাদ ঝেঁকে বসেছে। সেজন্য হয়তো মধ্য বামপন্থী দল আওয়ামী লীগ ডানে ঘুরতে ঘুরতে শফি হুজুরের আস্তিনে লুকিয়ে পড়ছে। কিন্তু সোনিয় গান্ধীর কংগ্রেস, বেনজির ভুট্টোর পিপিপি তা করেনি। সময় বলে দেবে আওয়ামী লীগের এ ইউটার্ন কী সঠিক নাকি কংগ্রেস-পিপিপির আদর্শিক দৃঢ়তা সঠিক। ফেসবুক থেকে