নিউজ ডেস্ক : ৫০ কেজির বস্তায় সার ছিল গড়ে ৪১ কেজি। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চার বছর পেরিয়ে গেছে। সারগুলো আকাশের নিচে পড়েছিল। জমাট বাঁধা সেই সার পেষাই যন্ত্রে গুঁড়া করে এখন নতুন বস্তায় ভরা হচ্ছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা।
এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, তদন্ত কি এত দিনেও শেষ হয়নি? চীন থেকে আমদানি করা সারে ওজনে কম দেওয়ার নেপথ্যে কারা? জমাট বাঁধা সারের মান কতটা ব্যবহার উপযোগী? নষ্ট হয়ে থাকলে তা কি উর্বর জমি বা ফসলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে? এ জন্য নতুন করে যে কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, তা কতটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে? ওজনে ফাঁকি ঢাকতেই কি নতুন বস্তা? বাকি সারের দায় কে নেবে?
সারগুলো রাখা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেডে। এটি সরকারের পে অব ঘোষিত দেশের সাদা কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এটিকে ট্রানজিট গোডাউন (টিজি) হিসেবে ব্যবহার করে।
গত রবিবার ওই এলাকা ঘুরে এবং কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ মে বিসিআইসির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫০০ টন খোলা গ্র্যানুলার ইউরিয়া (বাল্ক) সার চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। এই সারের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পরিবহন করে সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেড। পরে তা ৫০ কেজির প্যাকেট করে বিসিআইসির বিভিন্ন স্থানের গোডাউনে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ৩ মে ১০ হাজার টন সার (৫০ কেজির বস্তা হিসেবে) ঈশ্বরদীর টিজিতে রাখার কার্যাদেশ হয়। এই টিজিতে আসা সারের বস্তায় ওজনে ৫০ কেজির পরিবর্তে ৩৫, ৪১ ও ৪৮ কেজি ধরা পড়ে। ওজনে কম থাকায় গোডাউন কর্তৃপক্ষ সারগুলো না নিতে বিসিআইসির কাছে অভিযোগ করে। অভিযোগ না শুনে উল্টো গোডাউনের ওজন যন্ত্রে ত্রুটি আছে উল্লেখ করে সারগুলো নিতে গোডাউনকে বিসিআইসি চিঠি পাঠায়। একই সঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, বৃষ্টি বা বন্যায় সারের ক্ষতি হলে গোডাউন ইনচার্জকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর পরও গোডাউন কর্তৃপক্ষ বিসিআইসিকে ফের অভিযোগপত্র পাঠায়। ঠিকাদাররা তখন সারগুলো আকাশের নিচে ডাম্পিং করে রাখে। বিসিআইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সারগুলো দেশি ও বিদেশি পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানসহ একটি তদন্ত কমিটি ওই বছরই গঠন করে দেয়। কিন্তু তদন্ত আজও শেষ হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আকাশের নিচে ডাম্পিং করে রাখায় আশপাশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বসবাসকারীদের অসুবিধা হয়।
এরই মধ্যে অনেক সার নষ্ট হয়ে গেছে। আর প্রায় এক লাখ বস্তা সার জমাট বেঁধেছে। সেগুলো এখন পাওয়ার ক্রাশারের (যন্ত্র) মাধ্যমে গুঁড়া করে নতুন বস্তায় ভরা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি টাকা, যা বহন করছে বিসিআইসি। কিন্তু এই কাজ দেখার কেউ নেই। নিয়ম রয়েছে, বিসিআইসি ও আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় পরিবহন কম্পানির প্রতিনিধির সামনে সারগুলো গুঁড়া করে নতুন বস্তায় ভরতে হবে। কিন্তু কোনো প্রতিনিধি নেই। এ ছাড়া আগে বস্তা কেটে নতুন করে ভরলে আরো সার কম পড়ে যাবে। এর দায় নেওয়ার লোক নেই।
উপস্থিত শ্রমিকদের সর্দার সাহাজুদ্দিন জানান, তাঁরা দিন হাজিরায় কাজ করেন। তাঁদের সুকান্ত লিটন ভাড়া করে এনেছেন।
সুকান্ত লিটন জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দির যমুনা সার কারখানার ঠিকাদার কাজী আলমগীরের নির্দেশে সার ভেঙে নতুন বস্তায় ভরা হচ্ছে। এর বেশি কিছু জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
পাকশীর টিজি উপব্যবস্থাপক (বিক্রয়) ইকবাল আমিন রতন জানান, বস্তায় সারের পরিমাণ কম ছিল। এ কারণে বিসিআইসির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডাম্পিং করে রাখায় সারগুলো জমাট বেঁধেছে। তা ছাড়া চীন থেকে আমদানি করা সার মূলত শক্ত। তাই সেগুলো বিসিআইসির নির্দেশে পাওয়ার ক্রাশারে ভেঙে নতুন ব্যাগে ভরা হচ্ছে। এতে সারের পরিমাণ আরো কমে যাবে। তিনি বলেন, ‘সারগুলো আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পরিবহন করে আনা কম্পানি না থাকায় কমে যাওয়া সারের দায়িত্ব নেওয়ার লোক নেই।’ সার নষ্ট হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোলা জায়গায় সার রাখলে নষ্ট হয় বলেই তো কোটি কোটি টাকা খরচ করে গোডাউন নির্মাণ করা হয়।’
বিসিআইসি বগুড়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেনের মোবাইল ফোনে গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। এ কারণে অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা থেকে গেল।
সূত্র : কালের কণ্ঠ।
আপনার মতামত লিখুন :