শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া থেকে: মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ ও কাজ উভয়ই সহজ করে দিচ্ছে। সব নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী হবে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে ২২ এপ্রিল সোমবার বৈঠককালে এ কথা বলেন।
শাহরিয়ার আলম দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কোঅপারেশন (সায়াকো)র মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সমর্থন অর্জনের জন্য কুয়ালালামপুরে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উভয় দেশেই নতুন সরকার তাই সম্পর্কের নব উন্মেষ হবে এ প্রত্যাশা করেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক কালে শাহরিয়ার আলম মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং হচ্ছে এ জন্য মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি করে শ্রম নিয়োজন শুরু করেছে। যারা বৈধতা সংক্রান্ত সমস্যায় আছে তাদের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আশাকরেন মালয়েশিয়া সরকার দ্রুত নব নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহ আশা প্রকাশ করে বলেন, নিয়ম-কানুন ও পলিসি সংশোধন করে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার পুনরাবৃত্তি হোক তা মালয়েশিয়া সরকার চায় না।
বৈঠকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নির্যাতিতরা বিপুল পরিমাণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং বাংলাদেশ এ সকল অসহায় লোকদের পাশে থেকে যে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তাতে সাধুবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি করছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধতা পেয়েছে।
বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) এএফএম গৌছুল আজম সরকার এবং সেস্কো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধূরী এবং মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি একটি বেসরকারি খাত এবং ট্র্যাক -২ লেভেল ফোরাম - এই অঞ্চলের পাঁচটি ওআইসি দেশ - বাংলাদেশ, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং মালদ্বীপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
সদস্য দেশ ও তাদের আশেপাশের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতার এজেন্ডা নিয়ে বিশ্ব ইসলামী অর্থনৈতিক ফোরাম (ডাব্লুআইইএফ) মডেলে কাজ করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং জনসাধারণের ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করছে। বিদেশি মন্ত্রীদের প্রত্যাশিত অংশগ্রহণের সাথে সাথে ২০১৯ সালের জুনের শেষ দিকে ঢাকায় সিএইচওএর উদ্বোধনী সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য প্রস্তুত।
মালয়েশিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য গ্যাপ অনেক বেশি যা মালয়েশিয়ার অনুকূলে। বাংলাদেশি বেশি বেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার দিলে এ বৈষম্য কমে যাবে। তিনি আশাকরেন মালয়েশিয়া সরকার বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করার পদক্ষেপ নিবেন। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ এবং চেম্বারের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ক আলোচনায় মালয়েশিয়া আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হওয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে মালয়েশিয়া সরকার গুরুত্বের সাথে কাজ করছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
আজ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জালান সুলতান ইয়াহিয়া পেত্রাস্থ চেন্সারি ভবন এবং আমপাংস্থ পাসপোর্ট সার্ভিস কেন্দ্র ঘুরেফিরে দেখেন এবং সেবা প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলেন। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রবাসীদের সুন্দর সেবা নিশ্চিত করতে হবে। অপপ্রচার বা অন্যকোনভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে বলেন।