আবুল কাইয়ুম : সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ’র বিখ্যাত উপন্যাস ‘লালসালু’। ‘সালু’ মানেই তো ‘লাল কাপড়’। আর রবীন্দ্রনাথ ‘সাহিত্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ‘অশ্রুজল’ শব্দটি। ক্লাসিক গল্প-উপন্যাসে ছাত্রবৃত্তির বিকল্প শব্দ ‘জলপানি’ও বিরল নয়। মহারথীরা জল ও লালের এমনই দ্বিত্ব সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আমরা তো আর তাদের পর্যায়ের মানুষ নই। আমরা যদি বলি, ‘সদা-সর্বদা ভালো থাকবেন’ কিংবা ‘এমন চালাক-চতুর লোক খুঁজে পাওয়া ভার’ তাহলে আর রক্ষা নেই। বোদ্ধা পাঠকের নাক সিটকানিতে আমাদের দফারফা হয়ে যাবে।
আমাদের, তাই, ‘সদা বা সর্বদা’ কিংবা ‘চালাক বা চতুর’ লিখতে হবে। এ রকম অনেক ভুল আছে। এখানে শুধু কয়েকটি প্রচলিত ভুল তুলে ধরা হলো (বন্ধনীতে শুদ্ধরূপ)
কেবলমাত্র ( কেবল বা মাত্র), শুধুমাত্র (শুধু বা মাত্র), সময়কাল (সময় বা কাল), আয়ত্তাধীন (আয়ত্তে বা অধীন), দায়িত্বভার (দায়িত্ব বা ভার), সমতুল্য (সম বা তুল্য)।
এছাড়া এমন কিছু যুগ্মশব্দ শব্দ প্রচলিত আছে, উত্তর পদ ও পূর্ব পদ সমার্থক হলেও সেগুলো এ দুটি সমস্যমান পদের যেকানো একটির চেয়ে ব্যাপক অর্থ বা ব্যঞ্জনা প্রকাশ করে। এই শ্রেণির শব্দগুলো সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে, যথা : কাজকর্ম, লাজলজ্জা, সাজসজ্জা, আইনকানুন ইত্যাদি।
তবে বাক্যবন্ধে এসব শব্দের যাতে যথাযথ ব্যবহার হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন : কাজকর্ম’ শব্দটি নিছক ‘কাজ’ অর্থে ব্যবহার না করে যেন জীবিকা, পেশা বা দৈনন্দিন বিবিধ কাজ বোঝাতে প্রয়োগ করা হয়। ইদানীং ফেসবুকের কিছু কবিতায় সমার্থক শব্দের দ্বিত্ব দিয়ে গঠিত অভিনব যুগ্মশব্দ লক্ষ্য করা গেছে। এসব অবশ্যই মারাত্মক ভুল। কবিতাংশসহ কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো :
১. দিনের শেষান্তে : যদিও আর একটি দিনের সম্ভাবনা রেখে যায় সূর্য
(মন্তব্য ‘শেষে’ বা ‘অন্তে’ হবে।)
২. কোথায় শেষান্তর : একটুখানি মরণ ভয়ে, কাঁপে না অন্তর। ( মন্তব্য শুধু ‘শেষ’ হবে। অন্ত্যমিলের যুক্তিতে ভুল গ্রাহ্য নয়।)
৩. তোমার নুপুর-ছন্দে মাতি/গায়ে মাখি মলয়বাতাস। (মন্তব্য ‘মলয়’ মানে ‘দখিনা বাতাস’। শুধু ‘মলয়’ হবে।
৪. যে শহরে তুমি নেই, আগুন কামানে পুড়িয়ে দেবো সে শহর
হাওয়ার জলে উড়িয়ে হাওয়ার তুফান। (মন্তব্য তুফানের মধ্যেই হাওয়া আছে, অতিরিক্ত ‘হাওয়া’র দরকার নেই।) আশা করি, আমরা একটু সতর্ক হলে এই ধরনের দ্বিত্বজনিত ভুলগুলো এড়াতে পারবো। ফেসবুক থেকে