বিশেষ সংবাদদাতা: ২৮ বছর পরেও একটি বিতর্কহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হলেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সংগঠনগুলির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে সময়ের আগেই সরকার-দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাড়া বাকিদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার সঙ্গে বেমানান বলে অনেকেই মনে করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এই নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতা এবং দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধংসের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এদিকে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হয়েছে যে, বাকি ছাত্র সংগঠনগুলি একাট্টা হয়ে ভোট বানচালের চেষ্টা করেছে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য গুজব ছড়িয়ে শান্ত পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বর্জনকারী ছাত্র সংগঠনগুলির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘিরে রেখেছে বলে জানা গেছে। তারা নির্বাচন বাতিল এবং উপাচার্জের পদত্যাগও দাবি করছেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাছির জানিয়েছেন, অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন বা ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা চলছে, ফলে ভোট গণণায় কোনো প্রকার অনিয়মের সম্ভাবনা নেই।
নির্বাচন শুরু হওয়ার পর পরই কুয়েত মৈত্রী হলে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগে ছাত্রছাত্রীরা ভোটগ্রহণ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং চাপের মুখে ব্যালট বাক্স খুলে তার ভেতর সিল মারা ব্যালট পেপার পাওয়া যাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে হলের প্রোভোস্টকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ঘন্টা খানেক ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকার পর পুনরায় শুরু হয়। রোকেয়া হলেও একটি কক্ষে কয়েকটি ব্যালট বাক্স তালা মেরে রাখার দাবি তুলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ চালানোর এক পর্যায়ে তারা তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট বাক্সগুলি উদ্ধার করে তার ভেতর নতুন ব্যালট পেপার দেখতে পায়। এসব সকল সংগঠনের ছাত্রনেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা ব্যালটপেপারগুলি সিল-বিহীন দেখে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে গেলেও বাইরে এসে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতা নুরুকে ছাত্রলীগের মেয়েরা মারধোর করেছে বলে অভিযোগ আনা হলেও ঘটনার ভিডিও-তে দেখা যায় নুরু মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। ল্যাব এইড হাসপাতালের পক্ষ থেকেও বলা হয় যে, গতকাল থেকে পরিশ্রম করা ও নির্ঘুম রাত কাটানোয় তার শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দেওয়ার কারণে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা অনেক ক্ষেত্রেই রক্তপাত পর্যন্ত গড়িয়েছে কিন্তু এবারই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার-প্রচারণা কোনো রকম সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে কিন্তু শেষটা শেষ পর্যন্ত কতোটা ভালো হলো তা নিয়ে বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :