ডেস্ক রিপোর্ট : পাকিস্তানে আটক হওয়া ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরে পেয়েছে ভারত। দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও কিছুটা শান্তির বাতাস বয়ে গিয়েছে এ ঘটনায়। এরই মধ্যে ভারতে ব্যাপক আলোচিত অভিনন্দন। এই কৃতিত্বের জন্য দেশটির জাতীয় বীর বনে গেছেন তিনি। তবে অভিনন্দন কৃতিত্বে যতটা না আলোচনায় তারচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন তার গোঁফের কারণে।
এরই মধ্যে অভিনন্দনের মতো গোঁফ রাখার হিড়িক পড়েছে গোটা ভারতজুড়ে। দেশটিতে অনেকে তাকে অনুপ্রেরণামূলক একটি চরিত্র হিসেবেও দেখছেন। খবর বিবিসি ও আরটির।
এছাড়া শাড়ির ফ্যাশনেও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও আর যুদ্ধ যুদ্ধ আবহে ছাপানো শাড়িও। গুজরাটের এক কাপড় ব্যবসায়ী সিল্কের শাড়িতে ফুটিয়ে তুলেছেন ফিরে সেই পাইলটের ছবি।
পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানকে তাড়া করতে গিয়ে আটক হওয়া এবং মুক্তি পাওয়ার পর তার বীরত্ব নিয়ে যেমন নানা কথা ছড়িয়েছে, তেমনি তার অভিনন্দন-গোঁফ নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমে অভিনন্দনের গোঁফ ওয়ালা ছবি ভাইরাল হয়েছে।
অনেকে তার মতো গোফ রেখে এবং এমনকি সেলুনে গিয়ে অভিনন্দন স্টাইলে গোঁফ কাটার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বাহারি গোঁফকে ব্র্যান্ড হিসেবে নিয়ে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে।
ভারতের জনপ্রিয় একটি ডেইরি খামার তাদের দুধের বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে অভিনন্দনের গোঁফকে ব্র্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করে। অভিনন্দন যেভাবে গোঁফ রেখেছেন, সেটা ভারতে নতুন কিছু নয়। বলিউডে খলনায়কদের বাহারি গোঁফে দেখানো হয়।
দেশটির সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের অনেক কর্মকর্তা লম্বা বা পেঁচানো গোঁফ রাখেন। এমনকি চোরাকারবারিরাও বিভিন্ন স্টাইলে লম্বা গোঁফ রাখে। কিন্তু গত কয়েতদিনে ভারতে বাহারি বিভিন্ন ধরণের গোঁফের খ্যাতি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিনন্দনের কারণে বাহারি গোঁফ এখন সাহস ও দেশপ্রেমের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
ভারতের ব্যাঙ্গালোরে একটি সেলুন বিনামূল্যে অভিনন্দনের স্টাইলে গোঁফ কামিয়ে দিচ্ছে। এই সেলুনের মালিক নানেশ ঠাকুর বলেন, ‘অভিনন্দন দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সেকারণে আমি অনুভব করলাম যে, আমি তার মতো অনেক চেহারা দেখতে চাই। সেজন্য যারা ওই স্টাইল নিতে আগ্রহী তাদের বিনা পয়সায় আমি সেভাবে গোঁফ কামিয়ে দিচ্ছি। এটা আমার অনুভূতি থেকে করছি।’
তেজাস চৌধুরী যুদ্ধবিমান পাইলট অভিনন্দনের মতো করে গোঁফ কামিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘অভিনন্দন আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমি তার স্টাইল নিয়ে তাকে অনুভব করতে পারব না কেন?’
একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক নাভিন কুমার অভিনন্দনের মতো করে গোঁফ কামিয়ে বলেন, ‘অভিনন্দন আমাদের আসল হিরো। সেজন্য আমি তাকে অনুসরণ করেছি।’
সেলুনের মালিক নানেশ ঠাকুর বলেছেন, ‘অভিনন্দন যে স্টাইলের গোঁফ রেখেছেন, এটিকে গানস্লিংগার বলা হয়ে থাকে। তার গোঁফ দেখলে মনে হয়, একটি বিমান আকাশে ডানা মেলে উড়ছে।’
বেশিরভাগ ভারতীয় তাকে প্রথম দেখেছিল, পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রকাশ করা ভিডিওতে। তাতে দেখা যায়, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি তাকে ধরার পর তার চোখ বাধা এবং তার মুখমন্ডলে রক্ত।
অভিনন্দন পাকিস্তান থেকে ছাড়া পেয়ে দেশে ভারতে ফেরার পর থেকে দেশটির বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ তার ছবি এবং জাতীয় বীর লেখা ফ্যাস্টুন ব্যানার নিয়ে মিছিল সমাবেশ করেছেন।
এর আগে ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল রণবীর সিংয়ের গোঁফ। তার মতো করে অনেকে তরুণকে গোঁফ কাটতে দেখা যায়। সেই সময়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও পিছিয়ে ছিল না। নারীদের দেখা যায় অভির স্টাইলে গোঁফ এঁকে টুইটারে পোস্ট করতে।
তবে, দক্ষিণ ভারতে পুরুষদের মধ্যে এমন গোঁফ নতুন নয়।বিভিন্ন ছবিতে রজনীকান্ত ও চিরঞ্জীবিকেও এমন স্টাইলে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে পড়েন অভিনন্দন। পাকসেনারা তার সেই বিমান ভূপাতিত করলে প্যারাস্যুটে করে তিনি পাক ভূমিতে নামেন। স্থানীয় জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে তাকে হেফাজতে নিয়ে যান পাকসেনারা।
দীর্ঘ ৫৮ ঘণ্টা পাক কারাগারে অবস্থানের পর শুক্রবার রাত ৯টা ২১ মিনিটে তাকে ভারতের হাতে সমর্পণ করেন পাকিস্তানি সেনারা।