মারুফুল আলম : আদালতের জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণার পরও অস্থিত্ব সংকটে রয়ে গেছে তুরাগ নদী। সীমানা পিলার না থাকায় দখল হচ্ছে দুই পার। রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি প্রবাহ সচল রাখার তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। সীমানা পিলার ঠিকমতো না বসানোয় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত দাবি। ইনডিপেন্ডেন্ট।
তুরাগের সবচেয়ে রুগ্ন চেহারাটি ফুটে উঠে শুকনো মৌসুমে। মনে হয় যেনো কালো পানির এক নালা। গাজিপুরের বংশী নদী থেকে বেরিয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশতে ৬০ কিলোমিটার পথের ৪০ কিলোমিটারই দখলদারদের হাতে। নেই সীমানা পিলার। একদিকে বালু ফেলে ভরাট, অন্যদিকে পাড়সহ কাটা হচ্ছে জমি। স্থানীয় একজন জানালেন, আশেপাশের শিল্প কারখানাগুলোর ক্যামিকেলের তেল এবং বর্জ্যগুলো এই নদীতে নামে। এইজন্য দিনের পর দিন নদীর পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আরেক স্থানীয় জানালেন ডায়িং কারখানার ময়লা নামছে নদীতে।
পোষাক কারখানার বর্জ্য মিশছে টঙ্গী সেতুর পাশেই। চোরাপথে ফেলা হচ্ছে কেমিক্যাল বর্জ্য। আশুলিয়া অংশে চলছে ডজন দুয়েক সিমেন্ট কারখানার মিক্সার মেশিন। তুরাগের এই চিত্রে শংকা জানিয়েছে উচ্চ আদালতও। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে দেয়া হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বিস্তীর্ণ প্লাবন অঞ্চলের সাথে নদীর যোগাযোগ বিচ্ছিন হয়েছে। নদীর পরিসর হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে নদীর পাড়। বেঁচে আছে কেবল তলদেশ। কাজেই তুরাগ এখন আর নদী নেই। তুরাগ পরিণত হয়েছে নর্দমায়।
৩১ জানুয়ারি তুরাগকে জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করেছেন আদালত। তাই পরিবেশবাদিরা বলছেন, এখন থেকে নাগরিকের মতোই তুরাগ নদের মৌলিক অধিকারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দুর্নীতি দম কমিশনকে অনুরোধ করবো, আদালতের স্পষ্ট আদেশ উপেক্ষা করে যারা ভুলভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত করলো, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের এই দুষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান দিয়ে সমাধান আসবে না।