আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ৫ থেকে ১০টি জেলা এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
পোস্টে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৫–১০টি জেলা এবং ৭২ ঘন্টার মধ্যে ১৫–২০টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মানুষরা কি আবারও প্রতিবেশী ভারতের পানি সন্ত্রাসের শিকার হতে যাচ্ছে কি? গত ১১ ই আগস্ট (৩ দিন পূর্বে) যখন আমি প্রথম বাংলাদেশে একটি বড় মানের বন্যার আশংকার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম সেই সময় একটি তথ্য ইচ্ছাকৃত ভাবে চেপে গিয়েছিলাম রাজনৈতিক বিতর্কের ভয়ে। তবে আজকে সেই তথ্যটি শেয়ার করতে বাধ্য হচ্ছি রাজনৈতিক বিতর্কের ঝুঁকি নিয়েই।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ভারা বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর উজানে অবস্থিত ফারাক্কা বাধের গেট বন্ধ রেখে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ও বিহার রাজ্যের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গানদী এবং এই শাখা ও উপশাখা নদীগুলোর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ পানি আটকিয়ে রেখেছে জুলাই মাসের শুরু থেক আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত (সম্ভবত ১২ তারিখ পর্যন্ত। ফারাক্কা বাধের গেট বন্ধ রেখে পানি জমিয়ে রাখার প্রমাণ আমি বিশ্লেষণ করা শুরু করেছি জুলাই মাসের ১৫ তারিখের পর থেকেই। ১২ ও ১৩ই আগস্ট ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই ফুলে-ফেপে থাকা গঙ্গা নদীর পানি ধারণ ক্ষমতার অবস্থা আরও বিপদ সীমার উপরে চেলে গেছে।
যেদিন আমি দেশের একটি বড় মানের বন্যা পূর্বাভাস দিয়েছি সেই দিন আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভারত ফারাক্কা বাধের সকল গেট-খুলে দিতে বাধ্য হবে কারণ ঐ দিন আমার বিশ্লেষণে ধরা পরেছে যে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী কোন-কোন এলাকায় বন্যা শুরু হয়ে গিয়েছে যা পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে চরম আকার ধারণ করবে।
ফলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে খবর চলে আসবে ফারাক্কা বাধের গেট আটকে রাখার কারণে ঐ সকল এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমার অনুমান সত্য হয়েছে। ১৩ ই আগস্ট থেকে ফারাক্কা বাধের সকল গেট খুলে দেওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহী জেলার মানুষদের কাছ থেকে।
ফারাক্কা বাঁধের উজানে যে পরিমাণ পানি জমা রয়েছে তা কমানোর জন্য ফারাক্কা বাধের সকল গেট কমপক্ষে ১ থেকে ২ সপ্তাহ খুলে রাখার আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদ্মা নদীর, এবং এর শাখা ও উপনদীগুলোর তীরবর্তী জেলাগুলো বন্যা কবলিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে পুরো বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপরে (ঐতিহাসিক গড় অপেক্ষা)।
এই কারণে ইতিমধ্যে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বন্যা বিপদ সীমার কাছা-কাছি উচ্চতায় রয়েছে। ফলে গতকাল বুধবার ফারাক্কা বাধের সকল গেট খুলে দেওয়ার পর থেকে পদ্মানদীর শাখা নদীগুলো দিয়ে যে পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে তার কারণে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৫ থেকে ১০ টি জেলা এবং ৭২ ঘন্টার (আগামী ৩ দিনের মধ্যে) মধ্যে ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টি জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের যে জেলাগুলোর মধ্য দিয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ইতিমধ্যেও রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বন্যা বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শুরু করেছে। ফলে আজ থেকে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার অনেক এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
আশংকা করা যাচ্ছে আগামী রবিবার থেকে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনিসংহ বিভাগের ১৫ থেকে ২০ টি জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার।