শিরোনাম
◈ নিরাপত্তা হুমকিতে থাকা সাক্ষীকে সুরক্ষা দিতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ◈ ভারতকে পাক সেনাপ্রধানের পরমাণু যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র ◈ আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে: ইসি সচিব ◈ বিশ্বের শীর্ষ মুদ্রায় মুসলিম দেশগুলোর দাপট, প্রথম চারটি মধ্যপ্রাচ্যের ◈ গুলশানকাণ্ডে কোনো উপদেষ্টা জড়িত কিনা, স্পষ্ট হওয়া দরকার: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ অপুকে দিয়ে জোর করে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির ভিডিও বানানো হয়েছে: দাবি অপুর স্ত্রীর (ভিডিও) ◈ 'যদি কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং তাকে আটক করা না হয় তাহলে সে সহজেই অদৃশ্য হয়ে যাবে' ◈ চাঁদাবাজিতে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই, ৫ আগস্টের পর অপুর সাথে কথা হয়নি : আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ শিক্ষক মাহফুজার মৃত্যু ◈ ভোলাহাট সীমান্ত দিয়ে আবারও ১৩ জনকে পুশ ইন

প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:১৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবেশগতভাবে কেন সাদা পাথর নামে পরিচিত ও স্থান গুরুত্বপূর্ণ কেন? ক্ষতিকর প্রভাব কি? কীভাবে তৈরি হয়?

সিলেট নগরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে যে নদীর উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সেই নদীর নাম ধলাই নদ।

পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদী বেয়েই সাদা পাথর নেমে আসে। ধলাই নদের উৎসমুখের এই জায়গার নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। ঠিক এক বছর আগের এই স্থানের সৌন্দর্যকে ‘অনবদ্য ক্যানভাসের’ সঙ্গে তুলনা করেন কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক শাফকাত জামিল।

তিনি বলেন, ‘যতদূর চোখ যায় দুই দিকে কেবল সাদা পাথর আর মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আরেকদিকে পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। আপনার মনে হবে কাশ্মীরের মতো স্বর্গরাজ্য। সৌন্দর্যের এক অনবদ্য এক ক্যানভাস।’

জামিল জানান এই স্থান গত ১০/১২ বছরে মূলত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। কারণ হিসেবে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে মূলত এই স্থানটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়।

স্থানীয় একজন সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রিপন এবং জামিল দুইজনই জানান সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের রাস্তা একসময় খুব খারাপ ছিল। পাথর পরিবহণের কারণে সিলেটের সবচেয়ে খারাপ রাস্তা ছিল সিলেট টু ভোলাগঞ্জের রাস্তা।

কিন্তু রাস্তা ভালো হওয়ার পরে সিলেট শহর থেকে সাদা পাথর নামে পরিচিত ওই স্থানে যেতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগে।

জামিল বলেন, ‘কোনো পর্যটক যদি মনে করেন সিলেট শহরে থেকে নানা স্থানে ঘুরবেন তাহলে সাদা পাথরে আসতে তার মাত্র ৪০ মিনিট লাগবে। এ কারণে রাস্তা ভালো হওয়ার পর পর্যটকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এখন এখানে। ট্যুরিস্ট স্পট পরিচিতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় হয় প্রচুর।’

সিলেটের পরিবেশবিদ রেজা জানান, ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমনকি লিজও দেওয়া হয়নি ওই স্থান। রেজা বলেন, ‘গত চার বছরে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়নি, এখন তো প্রশাসনের কার্যকর অভিযানও দেখছি না।’

স্থানীয়রা জানান, ওই স্থানের একশ মিটারের মধ্যে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পের কাছে শুধুমাত্র সাদা পাথর এখন অবশিষ্ট রয়েছে। বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব দিকে এই সাদা পাথর পর্যটন স্পট অবস্থিত।

এরই মধ্যে গতকাল সোমবার সাদা পাথর লুট বন্ধ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। যেসব নৌকায় করে পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেগুলো অকার্যকর করে দেওয়া হয়।

গতকালকের অভিযানের পর মঙ্গলবার আর কেউ পাথর লুট করতে সেখানে যায়নি বলে জানান ভোলাগঞ্জে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রিপন।

তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে মূলত সাদা পাথর লুট হওয়া শুরু হয়। প্রশাসনে যে স্থবিরতা বা ভীতিই এই পাথর লুট হওয়ার কারণ। প্রশাসনের কঠোর না হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

গণমাধ্যমের কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে নৌকায় করে সাদা পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকি গর্ত খুঁড়েও পাথর তুলতে দেখা যায় এসব ভিডিওতে।

পরিবেশগতভাবে ‘সাদা পাথর’ স্থান গুরুত্বপূর্ণ কেন? ক্ষতিকর প্রভাব কি?

পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা স্বচ্ছ পানির এ আঁধার এই এলাকার বেশ কিছু স্থানের খাবার পানির চাহিদা মেটায়।

তিনি বলেন, ‘প্রথম গুরুত্ব হচ্ছে এই পাথরগুলো যেখান থেকে ন্যাচারালি আসে, ওইখান থেকে পানি প্রবাহের ভয়ংকর রকম তোড় তৈরি হয়। মানে পানি প্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যায়। যেখানে তোড় বেশি সেখানে পাথর জমে। পাথরের কাজ হয় ওই তোড়ের পানিটাকে ভেঙে ভেঙে টুকরো টুকরো করে তার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটা একটা প্রাকৃতিক ধাপ।’

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় পানির মধ্যে অক্সিজেন সংশ্লেষ করাও এর কাজ যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘সোলার অ্যাকুয়াটিক ন্যাচারাল প্রসেস অব ট্রিটমেন্ট’ বলা হয়।

প্রকৃতির এই পুরো সিস্টেমে যদি কোন ব্যাঘাত ঘটানো হয় অর্থাৎ পাথর তুলে ফেলা হলে তখন সিস্টেম ভেঙে পড়ে বলে জানান এই পরিবেশবিদ।

তিনি বলেন, এর ফলে দুপাশে প্লাবনের পরিমাণ বাড়ে, ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং পানিটাকে গোড়াতেই সাংঘাতিকভাবে পলিউটেড (দূষিত) করে ফেলে। মনে রাখা দরকার ওই অঞ্চলের অনেক জায়গায় খাবার পানির স্বল্পতা মেটায় এই পানি।

এসব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কারণে প্রকৃতিগতভাবে অন্যান্য ক্ষতি তৈরির অভিঘাত সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়