মোহাম্মদ জোবায়ের
যেকোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো শিশুর নাম, ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করতে পারবে না গণমাধ্যম। ১২ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গত বছরের ৫ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ‘বয় গেটস টেন ইয়ার্স ফর কিলিং ক্লাসমেটস’ অর্থাৎ ‘সহপাঠীকে হত্যার দায়ে বালকের দশ বছরের কারাদ-’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। এই খবরটির প্রেক্ষিতেই হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি দায়ের করে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। এরই জেরে এমন রায় দিলো হাইকোর্ট। সেইসাথে শিশু আইন-২০১৩ যাতে লঙ্ঘন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে আইন ও তথ্য সচিব এবং ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতিকে তাদের রিপোর্টারদের সচেতনভাবে রিপোর্ট করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
কোনো শিশুর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় ওই শিশুকে অপরাধী, দোষী বা অভিযুক্ত এই শব্দগুলো ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শিশু আইন-২০১৩ গৃহীত হয়েছিলো ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকার সনদটি গৃহীত হওয়ার পর। ওই সনদে শিশুদের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক অধিকারের বিষয়গুলো আমলে নেয়া হয়।
বাংলাদেশের আইনে কাদেরকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা শিশু আইন ২০১৩তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হযেছে। ওই আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী, আঠারো বছরের কম বয়সী সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করতে হবে। এই আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দাখিল করা হয়, সেই একই চার্জশিটে ঐ শিশুর নাম উল্লেখ করা যাবে না। এছাড়া ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী অপরাধের সাথে জড়িত ওই শিশুর বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে শিশু-আদালত নামে আলাদা আদালত গঠন করতে হবে। ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘শিশু-আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোনো শিশুর ছবি বা এমন কোনো বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না, যা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও ওই আইনে শিশুদের জন্য সুরক্ষামূলক আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
যাই হোক, আদালতের সাম্প্রতিক রায় ও শিশু আইন ২০১৩ উভয়েরই উদ্দেশ্য হলো-ফৌজদারি মামলায় জড়িত শিশুদের পরিচয় গোপন রাখা। অপরাধে জড়িত শিশুদের পরিচয় প্রকাশ পেলে তা ওই শিশুর সংশোধন ও পুনর্বাসনের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া আদালতের বিচার চলাকালে প্রিন্ট বা টেলিভিশনে কোনো শিশুর নাম, ছবি বা খবর প্রকাশ হলে যখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন সমাজ তাদের ভালোভাবে গ্রহণ নাও করতে পারে। বর্তমানে শিশু অপরাধীর হার বাড়ছে এবং এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে, এই শিশুদের অপরাধী বানাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীরাই। এর ফলে প্রাপ্তবয়স্কই হোক বা শিশু অপরাধীদের একটা দল তৈরি হচ্ছে যা দেশের শান্তি ও স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাই প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাদের নষ্ট করে ফেলা উচিত নয়। ফলে আইনগত ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেও সমাজের উচিত তাদের সাথে যথাযথ আচরণ করা।
(লেখক : বিলিয়ার গবেষণা সহকারী ও জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট। মূল ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)