সুজিত মোস্তাফা
আমার ছাত্রী সাবিহা নাবিহা গত সপ্তাহে ক্লাসে এলো মুখ কালো করে। আমি প্রচুর কাউন্সেলিং করি। আর নিজের ছাত্রছাত্রীরাতো সন্তানসম। কেন মন খারাপ জিজ্ঞেস করায় কিছুতেই মুখ খুললো না। শেষ পর্যন্ত বললো সে তার চশমা হারিয়েছে। খুব কি অপরিহার্য চশমা, নাকি অনেক দামি, জিজ্ঞেস করলাম। দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা কিন্তু প্রয়োজনীয় চশমা বটে। চশমা হারিয়ে এতোটা মন খারাপ হতে পারে ঠিক মানতে পারছিলাম না। অন্য কারণও আছে কিন্তু কিছুতেই সেটা সে বললো না। ২৪ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সে বাসায় এলো আমার খুব প্রিয় দুরকমের মিষ্টি প্যারাডাইসের রাজভোগ এবং প্যারা নিয়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি আমার জন্মদিন গেছে। সঙ্গে গিফট হিসেবে নিয়ে এসেছে চমৎকার একটা আড়ংয়ের পাঞ্জাবি এবং সুদৃশ্য একটা হাতঘড়ি। সে ঝলমল করতে করতে বললো, স্যার চশমা পেয়েছি। কীভাবে পেলে?
আসলে স্যার, গত সপ্তাহে আপনার জন্য গিফট কিনতে উত্তরার নর্থ টাওয়ারে গিয়েছিলাম, ঘড়ি কিনে একটা রিকশায় করে ঢাকায় আসার ট্রান্সপোর্ট খুঁজতে এদিক ওদিক দৌঁড়াচ্ছিলাম। কোনো বাস না পেয়ে একটা সিএনজি ধরলাম। চশমা চোখে দিতে গিয়ে দেখি চশমাও নেই যে ব্যাগে ঘড়িটা রেখেছিলাম সেটাও নেই। কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না ব্যাগটা কীভাবে মিসিং হলো। এইজন্যই মন এতো খারাপ ছিলো।
যাই হোক পরের দিন পাবো না জেনেও ওই ঘড়ির দোকানে গেলাম। কর্মচারীরা আমাকে দেখে হেসে বললো, চশমা খুঁজতে এসেছেন? এই নেন চশমা। আমাকে ভীষণরকম বিস্মিত করে বললো, আরো একটা জিনিস আছে, সেটাও নিয়ে যান। আমার কল্পনাকে হার মানিয়ে তারা ঘড়িটা বের করে দিলো। আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, আমি কি এখানে এগুলো ফেলে গিয়েছিলাম? না আপা, আপনি রিকশায় ফেলে গিয়েছিলেন। রিকশাচালক প্রায় দুই ঘন্টা পর ঘড়ির প্যাকেটে দোকানের ঠিকানা দেখে আমাদের কাছে জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে গেছে। সাবিহা ভীষণ অবাক হয়েছিলো নিঃসন্দেহে। কিন্তু রিকশাচালকের প্রতি আমার মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়েছে। এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে যখন আমি সততার এরকম উদাহরণগুলো পাই, মনে হয়, আহারে এখনো আমাদের সাধারণের মধ্যে কতো অসাধারণ মানুষ লুকিয়ে আছে।
সাবিহার আনা ঘড়ি আর তার ফিরে পাওয়া চশমার ছবিটা দিলাম। ছবিটা একারণেই দিলাম যাতে বোঝা যায়, একজন খেটে খাওয়া রিকশাচালকের জন্য এর লোভ ত্যাগ করাটা খুব সাধারণ কিছু নয়। ফেসবুক থেকে