সাইফুল বাতেন টিটো : শিশুতোষ গানের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে আসছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির মেয়ে মার্র্জিয়া বুশরা রোদেলা। রোদেলা এবার ক্লাশ সিক্সে পড়ছে রেডিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। বয়স এগারো। গান শিখেছে মায়ের কাছেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রোদেলার মা ন্যান্সির সাথে। রোদেলাকে সব সময় সকল বিষয়ে স্বাধীনতা দিয়েছেন ওর মা। গান গাইতে বা শিখতে চাপ সৃষ্টি করেননি কখনও। মায়ের মোবইলে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের গান রেকর্ড করতো রোদেলা। একদিন ভাইয়ের কল্যানে সে খবরটি পৌঁছায় ন্যান্সির কানে। মেয়ের গান শুনে অবাক হয়ে যান মা। একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে ন্যান্সি খুব সহজেই বুঝতে পারেন মেয়ের কণ্ঠে গান হবে। রোদেলার তাল, লয়, মানের সেন্স ইতিপূর্বেই তৈরি হয়ে গিয়েছে মায়ের গান শুনে শুনে। তারপর জানতে চান রোদেলার গান গাওয়ার ইচ্ছে আছে কিনা। খুব লাজুক ভঙ্গিতে সম্মতির কথা জানান মাকে। শুরু হলো মায়ের তালিম। পরিপক্কতা পাওয়ার পর ন্যান্সি নিজেই পরীক্ষা নেন মেয়ের। নিয়ে যান মগবাজারের একটি স্টুডিওতে। গাওয়ান কাজী নজরুলের ‘প্রজাপতি ও প্রজাপতি’ শিরনামের গানটি। সবাই চমকে যান সে গান শুনে। সেখানে হামিং দিয়েছেন ন্যান্সি।
এরপরই ন্যান্সি ভাবেন মেয়ের নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল করবেন। কারণ হিসেবে বলেন ‘রোদেলার নামে ইউটিউব চ্যানেল করার পিছনে আমার অর্থনৈক উদ্দেশ্য নাই মোটেই। সেখান থেকে আয় হলে হবে না হলে নাই। ওটা নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই।’
কেন তাহলে ইউটিউব চ্যানেল? তাও আবার শিশুতোষ গানের? এমন প্রশ্নে জবাবে জনপ্রিয় এই শিল্পী বলেন ‘একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আমাদের দেশে এখন আর শিশুতোষ গান হয়না বললেই চলে। আমরা ছোটবেলায় রেডিওতে টিভিতে প্রচুর শিশুতোষ গান শোনার সুযোগ পেয়েছি। এখন কিন্তু সেই সুযোগটা শিশুদের অনেক কম। আমার মনে আছে আমি একটি প্রগ্রামে অতিথি হয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে একটি ফুটফুটে শিশু নাচছে, খুব চমৎকারই নাচলো শিশুটি কিন্তু তার গান ছিলো কি জানেন? খাইরুন লো। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন? একটি শিশুর তো খাইরুন সুন্দরী গানের সাথে নাচার দরকার নেই। আমি খাইরুন সুন্দরী গান খারাপ বা ভালো বলছি না, কিন্তু গানাটি তো শিশুদের না। আমাদের বাংলা ভাষায় সেই সুকুমার রায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ নজরুল পর্যন্ত শিশুদের জন্য অনেক সুন্দর ছাড়া গান, গান লিখে গেছেন যার মধ্যে শিক্ষনিয় অনেক কিছু আছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেই গানগুলো কিন্তু নতুন করে গাওয়া হয়নি। ফলে শিশুরা বড়দের গানই শুনছে। এটা আমাকে খুব আলড়িত করেছে। আমি একজন শিল্পীর পাশাপাশি মাও বটে। আমার মনে হয়েছে এটা খুব জরুরী। এই যায়গা থেকেই আমি আসলে চ্যানেলটি করেছি। আমার বিশ্বাস আমার দেখাদেখি অনেক শিল্পীরাই এগিয়ে আসবেন, তাদের সন্তানেরা গাইবেন সেখানে কিংবা অন্য যে সকল শিশুরা গান গাইতে চায় বা রেকর্ড করতে চায় তাদেরও সুযোগ করে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
সম্প্রতি গানটির রেকর্ডিং হয়েছে বলে জানান ন্যান্সি। তিনি বলেন, ‘এটা অন্যরকম আবেগের একটা অনুভূতি। মেয়েকে স্টুডিওতে নিয়ে যাবার পর ঘরে আমার প্রথম গানের রেকর্ডিংয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ভেবেছিলাম, সে হয়তো নার্ভাস হবে। গাইতে গিয়ে থেমে যাবে। কিন্তু সে একটানে পুরোটা গান গেয়ে ফেলল! বেশ অবাকই হয়েছি।’ রোদেলার গাওয়া গানটি এ সপ্তহেই আপলোড করা হবে রোদেলা চ্যানেলে।
আপনার মতামত লিখুন :