কামরুল হাসান মামুন
একুশ যদি মাথানত না করতে শিখিয়েই থাকতো তাহলে আপনারা আজ ক্ষমতায় থাকতে পারতেন না। স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পরও ঢাকা শহরের মানুষগুলো যানজটমুক্ত একটি শহর পেলো না। উল্টো দিন দিন এর মাত্রা বাড়তে বাড়তে সহ্যের সীমা অনেক আগেই অতিক্রম করে গেছে। দুনিয়ার সভ্য ও উন্নত দেশের সরকাররা যেখানে নাগরিক সুবিধাকে বাড়াতে বাড়াতে তাদের বড় বড় শহরগুলোকে স্বপ্নের শহর বানাচ্ছে আর আমাদের সরকারগুলো আমাদের প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর শহরগুলোকে শুধু বলদামির কারণে নরকে পরিণত করেছে। প্রত্যেকটি মানুষ (কেবল ক্ষমতাবানরা ব্যতীত) দিনে ২ ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি রাস্তায় অপচয় করে। ঢাকাকে এখন আর মানুষের শহর মনে হয় না। মনে হয় এ যেন মৃত্যুপুরী।
গ্লোবাল ট্রাফিক ইনডেক্সে বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্বে প্রথম। ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাস অনুপযোগী শহর। ঢাকার ৯৫ পার্সেন্ট পানিতে মলের জীবাণু। ঢাকার নদী খালগুলো আজ নর্দমায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর আবাসস্থল আমাদের প্রাণের ঢাকা। ঢাকার বাতাস দিল্লি-বেইজিং ছাড়িয়ে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত।
ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ৩০০-র বেশি প্রায় সবসময় এবং মাঝে মাঝে এই মাত্রা ৫০০ ক্রস করে যেটা এক্সট্রিমলি হ্যাজার্ডাস। একটি সভ্য দেশের বাতাস এই মাত্রায় দূষিত হলে শিশুদের স্কুল বন্ধ করে দেয়। আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা কী আমাদের শিশুদের কথাও কী ভাবি? তাদের কী ঠিক মানুষের বাচ্চা মনে করি? সকল জীবের একটি প্রধান দায়িত্ব হলো নতুন প্রজন্মকে নিরাপদে বাঁচার পরিবেশ দিয়ে যাওয়া। আর আমরা আমাদের ক্ষণিকের সুখের তরে আগত প্রজন্মের জন্য একটি নরকসম শহর রেখে যাচ্ছি। আমাদের শিশুরা সালফেট, নাইট্রেট, এমোনিয়া, হেভি মেটাল ইত্যাদি শরীরে ঢুকিয়ে দিচ্ছি যাতে খুব শীঘ্রই ক্যান্সারে মরে!
শহরটাকে এমন বানিয়েছি যে কোথাও আগুন লাগলে দমকল বাহিনী ঢুকে যে আগুন নেভাবে তার জন্য ন্যূনতম অবস্থাও রাখিনি। কেউ গুরুতর আহত হলে বা অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পৌঁছার ব্যবস্থাও এই শহরে নেই। এ রকম একটি মৃত্যুপুরী হওয়া সত্ত্বেও কোথাও কোনো দাবি কিংবা প্রতিবাদ দেখি না। বরং উল্টো আমরা কতো উন্নত হয়ে গেলাম, পৃথিবী নাকি আমাদের উন্নয়নে বিস্মিত ইত্যাদি গান গাইতে ব্যস্ত। মনে হচ্ছে আমাদের নেতৃত্ব আমাদের বন্ধ্যা বানিয়ে ফেলেছে। আমাদের মাথানত করতে শিখিয়েছে। মাথা উঠিয়েছিলো শহিদুল আর মাইদুল। মাথা উঠিয়েছিলো নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের স্কুল ছাত্ররা। মাথা উঠিয়েছিলো কোটা বিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা। কিন্তু আমাদের পাশেই আছে কিছু মীরজাফর। তাদের সহায়তায় সরকার সফলভাবে দমন করে ফেলছে। প্রতিবার দমন করে ফেলা মানেই আমাদের শরীর সয়ে যেতে শেখে। ভয়ে নেতিয়ে যেতে শেখে যায়। দেশ আজ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে বিরোধী দল প্রতিবাদ মিছিল করতে সরকারের একান্ত বাধ্যগতের মতো পারমিশন চায়। এ রকম অবস্থা যদি ৫২-তে থাকতো কিংবা ৭১-এ থাকতো তাহলে কী এই দেশ কখনো স্বাধীন হতো? ফেসবুক থেকে