ইউসুফ বাচ্চু : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এ উপলক্ষ্যে বিকাল সাড়ে ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়াও একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ১নং গ্যালারিতে সব বিভাগ ও শাখার কাযক্রম নিয়ে প্রদর্শনী রয়েছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম: ‘যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে ১১০টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া। ১০টি যাত্রা উৎসব আয়োজন, যাত্রা নির্মাণ সহায়তাসহ যাত্রা উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন। পুতুলনাট্য নীতিমালা বাস্তবায়ন, কর্মশালা, সেমিনার, দিবস আয়োজন, ৪টি আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশগ্রহণ ও পুতুলনাট্য নির্মাণে সহায়তা প্রদান। দেশের ৫টি অঞ্চল থেকে লুপ্তপ্রায় ১৩০০ গান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। জাতীয় চিত্রশালায় এই সময়ে প্রায় ১৫০০ শিল্পকর্ম সংগ্রহ (বর্তমানে সর্বমোট সংগ্রহ প্রায় ২০০০)। দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী, নবীন চারুকলা প্রদর্শনী, জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী। প্রয়াত শিল্পীদের প্রতিকৃতি দিয়ে ৩টি গ্যালারি স্থাপন, ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে স্মরণ অনুষ্ঠান ও গ্রন্থ প্রকাশ।
সার্ক ফোক ডান্স ফেস্টিভ্যাল, সার্ক আর্ট ক্যাম্প, সার্ক হ্যান্ডিক্রাফট ফেস্টিভ্যাল, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন। জাতীয় সঙ্গীতের সিডি নির্মাণ ও বিতরণ। দেশব্যাপী ৬৮টি জেলায় ‘শিল্পের শহর কর্মসূচি’ পরিচালনা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ‘অ্যাক্রোবেটিক দল গঠন’ চীনে ২০জন শিশুর প্রশিক্ষণ ও ৫০জন শিল্পীর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনশতাধিক প্রদর্শনী। ৪৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার, মেরামত ও আধুনিকায়ন ও ২০টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। ১০টি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ ও ১০০টি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। জাতীয় চারুকলা এবং সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প চলমান।
নন্দনমঞ্চ, চারুকলা ভবনের ৩য় ও ৪র্থ তলা, হালুয়াঘাট, নওগাঁ ও দিনাজপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একাডেমি নির্মাণ। শচীনদেব বর্মণ, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ, এস, এম, সুলতান, লালন সাঁই, কাজী মোজহার হোসেন, সুচিত্রা সেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, মহাকবি কায়কোবাদ, সৈয়দ শামসুল হক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর ৬৪টি জেলায় ৭৬টি মুক্তিযুদ্ধের নাটক, ৬৪টি স্বপ্ন ও দ্রোহের নাটক, ৬৪টি সাহিত্য নির্ভর নাটক, ৬৪টি মূল্যবোধের নাটক, ৬৪টি ঐতিহ্যবাহী নাটক, ৬৪টি যাত্রা নির্মাণ, প্রদর্শনী ও উৎসব আয়োজন। ২০১৯-২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে গবেষণাধর্মী ও সারাদেশে ১০০টি নাটক নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। ২০২০-২১ সালে দেশের বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু।শিল্পের আলোয় মুক্তিযুদ্ধ, শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু, শিল্পের আলোয় ভাষা আন্দোলন শীর্ষক ব্যাপক শিল্পযজ্ঞ পরিচালনা। কেন্দ্রীয় ও ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সমন্বয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, জাতীয় শিশু চলচ্চিত্র উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ রয়েছে। প্রতি জেলায় চলচ্চিত্র সংসদ গঠন। জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, জাতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব, ৬৪ জেলার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন। যৌথভাবে ঢাকা আর্ট সামিট, জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুব নাট্য উৎসব, জাতীয় নাট্য উৎসব, জাতীয় পথ নাট্য উৎসব, একুশে নাট্য উৎসব, ঢাকা থিয়েটার ফেস্ট, আন্তর্জাতিক মনোড্রামা ফেস্টিভ্যাল, জাতীয় নৃত্য ও নৃত্যনাট্য উৎসব, সুফী সংগীত উৎসব, বাউল উৎসব ইত্যাদি আয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল আর্কাইভ ও ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল কো-অর্ডিনেশন সেল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ঐতিহ্য সংগ্রহশালা স্থাপন। ২০১৩ সাল থেকে ‘শিল্পকলা পদক’ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা প্রবর্তন।
ঢাকার বছরব্যাপী ১২টি বিষয়ে, ৬৪টি জেলায় ৪ বছর মেয়াদী ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা। ৪৯৩টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু। ‘বিশ্বের সব মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’ শিরোনামে বিভিন্ন ভাষাভাষী শিল্পীদের নিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং শিল্পকলায় অনুষ্ঠান পরিচালনা। প্রতিবন্ধী, বিশেষভাবে সক্ষম ও অবহেলিত শিশুসহ শিশু-কিশোর যুবদের নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা আয়োজন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকাশক্তি ও জঙ্গীবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন। প্রতিবছর দেশের পাঁচশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮টি সঙ্গীত ও সঙ্গীত সংস্কৃতি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা।দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদান নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ কার্যক্রম চলমান। ৫টি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান।দেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পীর গান নিয়ে অডিও সিডি প্রকাশ, ৮টি জাতীয় দিবস পালনে ৮টি গীতি আলেখ্য’র সিডি প্রকাশ করে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ কমিটি গঠন গবেষণা কর্ম পরিচালনা ও প্রকাশের উদ্যোগ।