শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:২৫ রাত
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি ৫ বছরেও

এস এম নূর মোহাম্মদ : রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে আন্দোলন হয়। যে আন্দোলনে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ আরও অনেকে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে এসে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায় আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এখন চর্চা হয় বাংলা ভাষার।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩-এ বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আর অনুচ্ছেদ ২৩-এ বলা আছে, রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন৷

১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইনও প্রণয়ন করা হয়। আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনগত কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে। যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন, তাহা হইলে উক্ত কার্যের জন্য তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তাহার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
কিন্তু উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার এখনো উপেক্ষিত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রুলস এখনো ইংরেজিতে রয়েছে। আদালতসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের নিয়ে আদেশ দিয়ে জারি করা একটি রুল পাঁচ বছর হলেও চ‚ড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম এখনো পর্যন্ত রয়েছে ইংরেজিতে।

আইনজ্ঞরা বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতেও বাংলা ভাষার ব্যবহার সময়ের দাবি। তাদের মতে, বাংলা ভাষায় উচ্চ আদালতের রায় হলে বিচারপ্রার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। সাধারণ মানুষও চান সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার। বিশেষ করে আদালতের ভাষা বাংলা হলে ভোগান্তি কমবে অনেকাংশেই। কারন নিজে আদালতের আদেশ এবং রায় বুঝতে পারলে আইনজীবীর পেছনে সময় ব্যায় করতে হবে কম। আর মামলাও নিষ্পত্তি হবে দ্রুত।

কয়েকজন বিচারপতি ব্যক্তিগত আগ্রহে বাংলায় মাঝে মধ্যে রায় দিলেও এর সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি নদী দখল নিয়ে হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। আর এর পুরোটাই দেওয়া হয়েছে বাংলায়। যা গণ মাধ্যমও গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছে। পর্যায়ক্রমে সব কোর্টেই বাংলায় রায় হবে এমনটা প্রত্যাশা বিচারপ্রার্থীসহ সব মহলের।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহারের দাবি নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ দূতাবাস ও বিদেশী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, নেমপ্লেট, গাড়ির নম্বর প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন। এছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী অফিস-আদালত, গণমাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এদিকে জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, হাইকোর্ট রুলস্ এবং আপিল বিভাগের রুলস্ বাংলায় করা উচিৎ। তাহলে বাংলায় রায় লিখতে সুবিধা হবে। আদেশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। সে বিষয়টিও এখনো পর্যন্ত শুনানি হয়নি। তিনি বলেন, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক রিট বেঞ্চে থাকলে বিষয়টি রুল শুনানি শেষে নিষ্পত্তি হয়ে যেত।

এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, যদি এমন কোন সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যাতে বাংলা মুখে বললে এটি সঙ্গে সঙ্গে টাইপ হয়ে যায় তাহলে বাংলায় রায় দেওয়া সুবিধা হবে। অবশ্য এখন এ সফটওয়্যার রয়েছে। অনেকে মোবাইলে তা ব্যবহারও করছেন।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এখন অনেক রায় বাংলায় হচ্ছে। তবে আমাদের নজীর এবং আইনগুলো ইংরেজিতে। অনেক আইন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা করা হয়েছে। সবগুলো হতে একটু সময় লাগবে। তবে এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এখন অনেকেই বাংলায় রায় দিচ্ছেন। তবে বাংলাভাষার ওপর আরও জোর দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়