নাঈমা জাবীন : ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে অর্থনীতির একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। যদি বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা হয়, তবে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার অর্থনীতির প্রসারকে যে প্রভাবিত করে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সূত্র : যুগান্তর
তিনি আরও বলেন, নেতিবাচক দিকটি হলো ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক আগ্রাসন ও আধিপত্য বিস্তার, পক্ষান্তরে ইতিবাচক দিকটি হলো নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। নেতিবাচক ধারণাটি বাঙালিরা পোষণ করে না। কারণ বাঙালিরা জানে মাতৃভাষাকে আঘাত করে বিদেশি একটি ভাষার আধিপত্য যখন অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন তা একটি জাতির আবেগ আর মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে। এ মনস্তাত্ত্বিক উদারতার ওপর ভিত্তি করে অন্যরা যখন ভাষা ও সংস্কৃতির আগ্রাসনকে অনুপ্রাণিত করার কৌশল অবলম্বন করছে, বাঙালিরা তখন বিষয়টিকে অন্যভাবে চিন্তা করছে।
যেখানে ভাষার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি মুখ্য না হয়ে বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য ও সৃষ্টির বিভিন্ন ধারা কীভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের মধ্যে ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে সেই বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠেছে। আমরা চাই পৃথিবীর মানুষ বাংলা ভাষার গভীরে প্রবেশ করে সৃষ্টির বৈচিত্র্য ও চিন্তাশীলতার প্রকৃত আস্বাদনের মাধ্যমে এ ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। বাঙালিদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেও এ ভাষার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়মিত সামরিক কর্মকা-ের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ সেনারা ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে থাকেন। সেখানকার জনগোষ্ঠীকে আন্তরিকতা ও আস্থা নিয়ে বাংলা ভাষা শেখাতে শুরু করেন। সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাকে খুব আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করে। এর সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাদের নিবিড় বন্ধন গড়ে ওঠে। লক্ষ্য করা যায়, যেখানেই বাংলাদেশি সেনাদল আছে, সেখানেই স্থানীয়রা বিশেষত তরুণ-তরুণীরা বাংলায় কথা বলতে পারছে। বিভিন্ন সভায় স্থানীয়রা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের বাঙালি নাচ ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সেনাদলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা পায়। স্থানীয়রা কাজ চালানোর মতো বাংলা ভাষা শিখে নেয়ার ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনাদল অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। ২০০২-এর পরে দেশটিতে শান্তি ফিরে আসে। প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশি সেনা সদস্যদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় রাখতে বাংলা ভাষাকে দেশটির সরকারি ভাষার মর্যাদা দিলেন। এভাবে বালাদেশের সেনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাত্র কয়েক দশক আগেও সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ভাষা অপরিচিত একটি মহাদেশে হয়ে উঠছে অন্যতম ‘শক্তিশালী’ ভাষা।