শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৩ দুপুর
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা ভঙ্গুরতা বাড়ছে

বণিক বার্তা : বিভিন্ন সেবায় দেশে ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যবহার বাড়ছে। আর্থিক লেনদেনের মতো কার্যক্রমেরও বড় অংশ হচ্ছে এই প্লাটফর্মে। ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা ভঙ্গুরতাও। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা যেমন দায়ী, একইভাবে দায়ী ব্যবহারকারীর অসচেতনতাও।

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের বড় অংশ হচ্ছে স্মার্টফোনে। স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যারের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান কম্পারিটেকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সেলফোনে ম্যালওয়্যার আক্রান্তের বিবেচনায় ১০টি দেশের মধ্যে সবার উপরে আছে বাংলাদেশ। দেশের মোট সেলফোনের ৩৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত। ম্যালওয়্যারের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় ব্যক্তিগত কম্পিউটারও (পিসি)। ক্ষতিকর ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত দেশের ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তিগত কম্পিউটার।

কম্পারিটেকের তালিকায় থাকা বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার বিবেচনায়ও বাংলাদেশের অবস্থা বেশ নাজুক। ডিজিটাল নিরাপত্তা দুর্বলতায় ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।

ডিজিটাল রূপান্তরের পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা যে একটা বড় ইস্যু, তা বুঝতে বেশ সময় নিয়েছি আমরা। আমাদের ওয়েবসাইটগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের তথ্যও বলছে, আর্থিক খাতের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানও এ ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তা মূলত সচেতনতার অভাবের কারণেই। আমি এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আধাসরকারি চিঠি দিয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা দুর্বলতা রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতেও। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মধ্য দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতার বিষয়টি সামনে আসে। সুইফট সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় অপরাধীরা।

আর্থিক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) বিভিন্ন সময়ের গবেষণায়। ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিআইবিএম দেখিয়েছে, এর মধ্যে এটিএম কার্ডে জালিয়াতির ঘটনা বেশি। প্রায় ৪৩ শতাংশ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। ২৫ শতাংশের মতো জালিয়াতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটেছে।

সাইবার হামলার উচ্চ ঝুঁকি থাকলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেই অনেক ব্যাংকের। বিআইবিএমের গবেষণা বলছে, বড় ধরনের সাইবার হামলা মোকাবেলায় কোনো প্রস্তুতি নেই ২৮ শতাংশ ব্যাংকের। আংশিক প্রস্তুতি রয়েছে ৩৪ শতাংশ ব্যাংকের। এছাড়া সিংহভাগ ব্যাংকেই আইটি গভর্ন্যান্স নেই।

প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবার দিক থেকে দেশে সামনের সারিতে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সর্বাধিক এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিচ্ছে ব্যাংকটি। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাসেম মো. শিরিন বলেন, বিশ্বব্যাপীই আর্থিক খাত এখন প্রযুক্তিনির্ভর। এতে আর্থিক সেবাগুলো সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বেই ব্যাংকগুলো এখন সাইবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোকেও একই পথে হাঁটতে হবে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে সেলফোন, বিশেষ করে স্মার্টফোন। দেশে সেলফোন হ্যান্ডসেটের ৪০ শতাংশ স্মার্টফোন, যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে ব্যবহারকারীর অসচেতনতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মাধ্যমটি সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ সহজেই সাইবার হামলার শিকার হচ্ছেন। এতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তারা আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। একইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছেন।

তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ম্যালওয়্যার এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমিত থাকলেও সেলফোনে আর্থিক লেনদেন খাতেও এটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

ব্যবহারকারীদের অসচেতনতার কারণেও ভঙ্গুর হয়ে উঠছে ডিজিটাল প্লাটফর্ম। সঠিক উপায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার না করার কারণে অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করছে। পরবর্তী সময়ে এসব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ কিংবা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। এ ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইলের ব্যবহার রোধে নীতিমালা করেছে সরকার। নীতিমালায় দাপ্তরিক কাজে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে গভডটবিডি ঠিকানাযুক্ত ই-মেইল ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। যদিও এ বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করছেন না বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রায় সব কর্মকর্তাই সরকারি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিগত ই-মেইল উল্লেখ করেছেন। সরকারি ডোমেইনে ই-মেইলের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে, এমন মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা হাতে গোনা।

সচেতনতার অভাব রয়েছে ওয়েবসাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। না জেনেই অনেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিংকে প্রবেশ করছে। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এমনিতেই দেশে বিনামূল্যের বা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা রয়েছে। সিংহভাগই অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও তুলনামূলক বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়