নাঈমা জাবীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য উন্নয়নের অন্য একটি প্রধান অন্তরায় দেশে মহিলাদের অপরিকল্পিত ও অসময়ে গর্ভধারণ, গর্ভপাত, গর্ভকালীন জটিলতা, গর্ভাশয়ের সংক্রামণ, প্রসবকালীন মৃত্যু ইত্যাদি। এসব সমস্যার কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর হাজার হাজার নারীর স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু ঘটে। মায়েদের এ রকম মৃত্যুর কারণে পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হয়। বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোয় প্রতিবছর ৬ লাখ নারী এসব কারণে মৃত্যুবরণ করে। একটু সতর্ক হলে ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিলে এ মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। অন্যান্য অনুন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। এসব দেশে বাল্যবিয়ে ও অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতা স্বাস্থ্য উন্নয়নের আরেক অন্তরায়। সূত্র : যুগান্তর
তিান বলেন, ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মেয়েদের বাড়তি এক বছর স্কুলে পাঠালে সন্তান ধারণের হার পাঁচ থেকে দশ শতাংশ কমে আসে এবং তাদের আয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষিত মায়ের সন্তানরা বেশি বাঁচে ও স্বাস্থ্যবান হয়। আমাদের মতো দেশে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর হার অশিক্ষিত মহিলাদের শিশুমৃত্যু হারের অর্ধেক। সুতরাং মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে, শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং বাল্যবিয়ে ও অধিক সন্তান জন্মদানের কুফল সম্পর্কে মহিলাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
একসময় মানুষ গ্রামে বসবাসে বেশি আগ্রহী ছিলো। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন শহরমুখী হয়ে পড়েছে। আগামী শতাব্দীতে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ গ্রামের চেয়ে শহরে বসবাসে বেশি উৎসাহী হবে। এতে করে শহুরে জীবনের ওপর চাপ বাড়বে। শহরের পরিবেশ বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হবে। অনুন্নত দেশের শহরগুলোয় এ অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বর্তমান অবস্থা চিন্তা করা যেতে পারে। শহরের দূষিত পরিবেশের কারণে নগরবাসীর স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণে এখনই সুষ্ঠু ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামী দিনে এ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, এ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে শিশুরা। কোলাহল ও গাড়ির হর্ন প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের অধিক ক্ষতি করছে। এতে করে শিশুদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে, শ্রবণশক্তি কমে যাচ্ছে, মনোযোগ প্রদানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আচার-আচরণে পরিবর্তন আসছে, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের হার বাড়ছে, আইকিউ কমে যাচ্ছে। এসব ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে নগরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ ও শব্দদূষণ বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। তাই নগরের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।