মাহফুজ নান্টু: বছর খানেক আগে কুমিল্লা বারপাড়ায় কবরস্থানের জায়গা ও এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে খুন হয় রাসেল-হানিফ নামের দু’যুবক। সেই খুনের মামলার অন্যতম আসামি নুরপুরের পলাশ। যার চাপাতির কোপেই গত সোমবার বিকালে খুন হাউজিং এলাকার ৩ নং সেকশনের ৬৩ নং বাড়ির মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে এজাজ আহমেদ। মঙ্গলবার বাদ মাগরিব জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এজাজের মরদেহ।
এলাকাবাসী জানায়, নুরপুর এলাকার পলাশ,আকাশ,দুলালসহ আরো অন্তত ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হামলা করে। এছাড়াও নুরপুর ও হাউজিং এস্টেট এলাকায় প্রকাশ্য ছিনতাই-মারামারিসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত। পুলিশের তালিকায় পলাশ খুনের আসামি হলেও জামিনে থাকা অবস্থায় এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাউজিং এস্টেট ও নুরপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, দেবিদ্বার উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. দুলাল হোসেন হাউজিং এস্টেট ৩নং সেকশন এলাকার শহীদুল হক দুলালের মেয়ে সানজিদা সুলতানা মুন্নি নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। মুন্নির স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়। এদিকে একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়ে স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে ছিলেন। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে মামলায় জামিন পায় ওই যুগল দম্পত্তি। মুন্নি বাবার বাড়িতে থাকতেন। সোমবার সন্ধ্যায় দুলাল মুন্নিকে নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। কিন্তু মাদকাসক্ত স্বামীর সাথে যেতে রাজি হয়নি মুন্নি। এ নিয়ে স্বামী দুলাল স্ত্রী মুন্নিকে মারধর করে। এ সময় প্রতিবেশী মৃত সেকান্দর আলীর ছোট ছেলে হাকিম ঝগড়া মিটিয়ে দেবার জন্য এগিয়ে গেলে দুলাল হাকিমকে থাপ্পড় মারে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে দুলালের ডাকে নুরপুর এলাকার পলাশ,আকাশসহ আরো তিন চারজন যুবক হাকিমকে মারার জন্য চাপাতি ও রামদা নিয়ে হাকিমদের বাড়ির সামনে আসে। এ সময় হাকিমের বড় ভাই এজাজ ঘর থেকে বেরিয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে বাড়ির গেট পার হলেই পলাশ তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে এজাজের ঘাড়ে কোপ মারে। সাথে থাকা আকাশ রাম দা দিয়ে স্থানীয় দুলালের দোকান কুপিয়ে ভাংচুর করে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে। এদিকে পলাশের চাপাতির কোপে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এজাজ। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পর অবস্থা আশংকাজনক হলে স্বজনরা আহত এজাজকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়। পথে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মৃত্যুবরণ করে এজাজ। মঙ্গলবার বাদ মাগরিব জানাযার নামাজ শেষে এজাজের মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মা রানু বেগম। বুক চাপড়িয়ে বলেন,আমার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। কেন তারা আমার ছেলেটিরে এভাবে মেরে ফেললো। পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে করে মা রানু বেগম বলেন,তার স্বামী সেকান্দর আলী ১৮ বছর আগে মারা যান। তারপর থেকে ৭ ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে বহু কষ্ট করে লালন পালন করেছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে রানু বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও তোমরা। এ সময় মাকে সান্ত¦না দিতে এসে মেয়ে শাহিদা,সালেহা ও শরিফা বেগম মুর্ছা যান। প্রতিবেশীদের কোন সান্ত¦নাই যেন সন্তান হারা মায়ের শোককে ভুলাতে পারছে না।
এদিকে খুনের বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, চান্দিনা কোরপাই এলাকার ওই দুলালের নামে ৪টি হত্যা মামলা রয়েছে। হত্যা মামলায় দুলাল ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন কারা ভোগের পর গত কয়েকদিন পূর্বে বের হয়। মুন্নি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে এজাজের খুনের সাথে জড়িত পলাশ বারপাড়া এলাকার জোড়া খুনসহ একাধিক মামলার আসামি। এজাজের জানাযার নামাজ শেষে পলাশ,আকাশ,দুলালসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিহত এজাজের পরিবার থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে খুনিরা অচিরেই ধরা পড়বে। কারণ খুনের ঘটনার পর থেকে পুলিশ খুনের সাথে জড়িতদের আটক করতে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে।